চট্টগামে ৩ এবিটি সদস্য ও ঢাকায় জামায়াতের ১৮ নেতা–কর্মী গ্রেপ্তার
2016.08.19
চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করাছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, তারা তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ঢাকার একটি স্কুল থেকে জামায়াতে ইসলামীর ১৮ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে জঙ্গি দমন অভিযান নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক জোরদার হচ্ছে। বিএনপি বলছে, সরকার জঙ্গিবাদ নির্মূল না করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। অন্যদিকে সরকার বলছে, বিএনপি আইএস ও জঙ্গিদের সমর্থক।
এবিটির তিন সদস্য গ্রেপ্তার
পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন নিজেদের আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও জিহাদি বই উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. ফরহাদ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক ছাত্র মো. এমরান ও বেসরকারি শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের সাবেক ছাত্র আহমেদ রনি। ফরহাদকে নগরের ডবলমুরিং এলাকা থেকে, এমরানকে কর্ণফুলী এলাকা থেকে ও আহমেদ রনিকে পটিয়ার দলঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল হাসান বেনারকে বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।”
জামায়াতের ১৮ নেতা-কর্মী আটক
রাজধানীর মেরুল বাড্ডার ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জামায়াতের ১৮ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তারা ওই স্কুলে বসে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল বলে দাবি পুলিশের। শুক্রবার সকালে ডিআইটি প্রকল্পের ভেতরে অবস্থিত ওই স্কুলে গোপন বৈঠক করার সময় তাদের আটক করা হয়।
মানববতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী ওই স্কুলের অধ্যক্ষ। শামসুন্নাহারও জামায়াতের নেতা। তিনি দলটির মহিলা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক। তবে অভিযানের সময় অধ্যক্ষ স্কুলে ছিলেন না।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বেনারকে বলেন, “বাড়ির মালিক বিল্লাল হোসেনসহ মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে।”
বাড়িটির মূল ফটকে অভিযানের পর থেকে তালা দেওয়া রয়েছে। স্কুলটিতে প্লে গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। প্রায় তিন বছর আগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
চার নারী জঙ্গি রিমান্ডে
সন্দেহভাজন চার নারী জঙ্গি গ্রেপ্তারের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার তদন্তভার শুক্রবার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। “মামলা তদন্ত করতে আগ্রহ প্রকাশ করায় মামলার নথিপত্র ও আসামিদের র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে,” বেনারকে জানান মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ও মিরপুর থানার পরিদর্শক (অভিযান) মোহাম্মদ শাহজালাল আলম।
সম্প্রতি ঢাকা ও গাজীপুর থেকে চার সন্দেহভাজন নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরা হল; মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান (মনি), ইশরাত জাহান (মৌসুমি), খাদিজা পারভিন (মেঘলা) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ইসতিসনা আক্তার (ঐশী)।
গত বুধবার আদালত তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুক্রবার তাদের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন পার হয়েছে।
র্যাব বলছে, এই চারজন ‘নতুন ধারার জেএমবির’ সদস্য। এ সংগঠনটির দক্ষিণাঞ্চলের আমির মো. মাহমুদুল হাসানকে গত ২১ জুলাই গ্রেপ্তারের পর র্যাব আকলিমার ব্যাপারে তথ্য পায়। এরপর গত সোমবার র্যাবের সদস্যরা গাজীপুর, মিরপুর ও মগবাজারে অভিযান চালিয়ে আকলিমাসহ চার নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে।
জঙ্গিবাদ নিয়ে পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য
সরকার জঙ্গিবাদ নির্মূল না করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বলেই দেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “দেশে গণতন্ত্রহীনতা চলছে। আজকে জঙ্গিবাদের যে ভয়াবহ একটি দানব দেশকে গ্রাস করতে চলেছে, জঙ্গিবাদকে সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা না করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটাকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে।
“এটা এখন পরিষ্কার, জঙ্গিবাদকে তাঁরা (সরকার) নির্মূল করতে চায় না। এটাকে (জঙ্গিবাদ) তাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়। এজন্য তাঁরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে জঙ্গিবাদ ক্রমশই বেড়ে চলেছে,” বলেন ফখরুল।
এদিকে গতকালই পৃথক এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ মন্তব্য করেছেন যে, বিএনপি আইএস ও জঙ্গিদের সমর্থক। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তোফায়েল এসব কথা বলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, হলি আর্টিজানে যারা মারা গেছে, কল্যাণপুরের অভিযানে যারা মারা গেছে; সন্তানের লাশ নিতে তাদের বাবা-মাও আসেননি। অথচ বিএনপি তাদের জন্য মায়াকান্না করে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন—কার সঙ্গে জাতীয় ঐক্য? যারা গ্রেনেড হামলা করে, হরতাল-অবরোধের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং যারা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পক্ষে কথা বলে, তাদের সঙ্গে ঐক্য?
উল্লেখ্য, জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন, যার সমালোচনা করে আসছে সরকারি দল।