আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ৬ জনের ফাঁসি

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2016.06.15
AhsanUllah-Master620.jpg সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১২ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় খুনীদের ফাঁসি দাবি করা হয়। মে ৭, ২০১৬।
বেনার নিউজ

এক যুগ আগে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার ঘটনায় বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকারসহ ৬ জনকে দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত। সাজা কমানো হয়েছে সাতজনের, আর খালাস পেয়েছেন ১১ আসামি।

বুধবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ এই রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ রায় দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টঙ্গী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় এই নেতাকে ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ওমর ফারুক রতন নামে আরো একজন স্কুলছাত্র খুন হন।

২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ওই মামলার আসামি বিএনপির নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালত। তবে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের দুজন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। বাকি ২৬ জনের মধ্যে কারাগারে আটক রয়েছে ১৭ জন আর পলাতক নয়জন।

আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকা ছয় আসামি হলেন; নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দীপু, শহীদুল ইসলাম শিপু, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।

টিপু ও নুরুল আমিনের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রয়েছে। উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যে সাতজন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন, তারা হলেন মো. আলী, আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু, জাহাঙ্গীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর, রতন মিয়া ওরফে বড় মিয়া রতন, মশিউর রহমান ওরফে মনু ও  আবু সালাম ওরফে সালাম ।

আমির হোসেন, ফয়সাল, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, রনি মিয়া, খোকন, লোকমান ও দুলাল মিয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন। আর মনির, রকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী ও জাহাঙ্গীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন।

সন্তুষ্ট নয় পরিবার

তবে এ রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের পরিবার। তাঁর ছেলে ও একই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল এ বিষয়ে বেনারকে বলেন, “এ রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। কারণ, দোষীদের অনেকেরই দণ্ড কমানো হয়েছে। কয়েকজন খালাসও পেয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব আমরা।”

তবে মামলার প্রধান আসামি ও বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম সরকার নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তার ভাই বিএনপির সাবেক সাংসদ হাসান উদ্দিন সরকার।

তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আমরা পরে জানাবো।”

তবে এ রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছে গাজীপুরে সাধারণ মানুষ। আহসান উল্লাহ মাস্টারের নির্বাচনী এলাকার ভোটার শহীদুল ইসলাম বেনারকে বলেন “একজন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি ছিলেন আহসানউদ্দিন মাস্টার। গাজীপুর সদর উপজেলার প্রতি ইউনিয়ন, প্রতিটি গ্রাম, প্রায় সব বাড়ি ছিল তাঁর চেনা। শিল্পোন্নত গাজীপুরের ভূমিদস্যু আর মাদক সম্রাটদের উত্থানের পথ রুদ্ধ করে তিনি গাজীপুরবাসীকে এক উন্নত গাজীপুরের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।”

শহীদুল আরও বলেন, তাঁকে হত্যা করার মাধ্যমে ভূমিদস্যু আর মাদক সম্রাটেরা গাজীপুরের সামাজিক উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিয়েছে। গাজীপুরবাসীর জন্য এ ক্ষতি অপূরণীয়। তবে আমরা চাই দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা দ্রুত কার্যকর হোক।

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন: আদালত

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের পরিহার করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন উচ্চ আদালত।

আলোচিত আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার আপিলের রায়ে দেওয়া পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, অনেকাংশে রাজনৈতিক দলগুলো উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দলগুলোর উচ্ছৃঙ্খল কর্মীনির্ভরতাই সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।

আদালত আরও বলেছেন, সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না বরং গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।