দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় সরকার
2016.06.24
জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় সরকার। অন্যদের মধ্যে ভীতি তৈরি করাই এর অন্যতম লক্ষ্য।
তবে পুলিশের খাতায় তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের একটি বড় অংশ পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তাদের অনেককেই আর খুঁজে পায়নি পুলিশ।
বিশ্লেষকেদের মতে, আইনের সকল প্রক্রিয়া সঠিকভাবে মেনে দ্রুততার সঙ্গে জঙ্গিদের বিচার করা উচিত। একইসঙ্গে এ ধরণের অপরাধীরা যাতে পার পেয়ে না যায় সে বিষয়েও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তাঁরা।
২১ জঙ্গির মামলা নিষ্পত্তির সুপারিশ
দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে ৪৮১ জন জঙ্গি। এদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২১জনের ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ চিহ্নিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।
গত নয় বছর কোন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়নি। সর্বশেষ ২০০৭ সালে ‘বাংলা ভাই’ ও শায়ক আবদুর রহমানসহ ছয় নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।”
২১ জঙ্গির নাম
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২১ জন জঙ্গির তালিকা করেছে তারা সবাই জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও হরকাতুল জিহাদ কর্মী।
এরা হচ্ছে; মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সি, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আদনান সামী ওরফে আম্বার ওরফে জাহাঙ্গীর, শরিফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল, আশরাফুল ইসলাম ওরফে আরশাদ ওরফে আব্বাস, তৈয়বুর রহমান ওরফে হাসান, মামুনুর রশিদ ওরফে জাহিদ, এনায়েত উল্লাহ ওরফে জুয়েল ওরফে ওয়ালিদ, আক্তারুজ্জামান, মালেক হোসেন ওরফে মালেক জিহাদি ওরফে মালেক ব্যাপারী, আসাদুজ্জামান ওরফে পনির, কামারুজ্জামান ওরফে স্বপন, সাইফুল ইসলাম রাসেল, আবদুল্লাহ আল সোহাইল ওরফে আল ফারুক ওরফে জাহিদ ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে আকাশ, মাওলানা আকবর হোসেন ওরফে হেলালউদ্দীন, মসিদুল ইসলাম মাসুদ ওরফে ভুট্টো, আমজাদ আলী ওরফে মো. হোসেন, নিজামউদ্দিন রেজা ওরফে রনি ওরফে ররি এবং সাইফুল মুনশি ওরফে শহীদুল মুনশি ওরফে ইমন ও আরিফুর রহমান আরিফ ওরফে আকাশ ওরফে হাসিব।
সকল আইনি প্রক্রিয়া মানতে হবে
দেশে জঙ্গি দমনের পক্ষে সমর্থন থাকলেও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, তা হতে হবে সকল আইনি প্রক্রিয়া মেনে।
এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বেনারকে বলেন, “জঙ্গিবাদ দমনে অবশ্যই সরকারকে কঠোর হতে হবে। কারণ, এটি একটি বিশেষ ধরনের অপরাধ এবং রাজনৈতিক অপরাধ। তবে সকল আইন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেই তা করতে হবে।”
বেশির ভাগ জঙ্গি ধরা ছোঁয়ার বাইরে
জঙ্গি রোধে গত বছর পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স গ্রুপ (এসটিজি) গঠিত হয়। তাঁরা সারা দেশের জঙ্গিদের তালিকা তৈরি করে। ওই তালিকায় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় তিন হাজার সদস্য রয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানের পরেও এদের বিরাট একটি অংশ পুলিশের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। পুলিশের হিসেবে, এ সংখ্যাটি প্রায় আড়াই হাজার। নানা সময়ে জামিন পাওয়া প্রায় ৫০০ জঙ্গিও এ তালিকায় রয়েছে। জামিনের পর তাদের আর কোন খোঁজ পায়নি পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, চলতি মাসে শুরু হওয়া জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পূর্বে তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের মধ্যে আটক ছিল ৩২৮ জন। সপ্তাহব্যাপী চলা বিশেষ অভিযানে আরো আটক হয় ১৯৪ জন।
এই নিয়ে তালিকায় থাকা তিন হাজারের মধ্যে আটক জঙ্গির সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২২ জনে। বাকি ২ হাজার ৪৭৮ জন জঙ্গির খোঁজ জানে না পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, তালিকায় থাকা জঙ্গিরা জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরীর, জেএমজেবি, শাহাদাত-ই আল হিকমা, হরকাতুল জিহাদ,আল্লাহ্র দলের সদস্য।
তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, সাত দিনের বিশেষ জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষ হলেও এই তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের ধরতে পুলিশে তৎপর থাকবে।
জঙ্গি দমনে আরো সৃজনশীল হতে হবে
সক্রিয় জঙ্গির সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে নূর খান বলেন, “দেশে ও বাইরে প্রকৃত জঙ্গির সংখ্যা আমরা কেউ জানি না। কেবল যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে অল্প কিছু তথ্য পাওয়া গেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদেরই এ তালিকায় রেখেছে।”
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করছে। তাই জঙ্গিবাদ রোধে আরো সৃজনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বেনারকে বলেন, “জঙ্গিবাদের বিকাশ দেশের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব ফেলছে। তাই আরো গভীরভাবে ও সৃজনশীলভাবে এ ধরনের উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।”