সন্ত্রাস, আতঙ্ক ও উন্নয়নের বছর ছিল ২০১৫
2015.12.31

পেট্রলবোমায় নিষ্ঠুরভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারার মাধ্যমে যে বছরের শুরু হয়েছিল, তা শেষ হতে যাচ্ছে বোমা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। বিদায় বছরের রাজনীতিতে আলোচিত বিষয় ছিল সন্ত্রাসের নিত্যনতুন ধরন, যার শেকড় সম্পর্কে নানা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও যোগসূত্র সেভাবে উদ্ঘাটন হয়নি।
বিদায় বছরে রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাচিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি হয়নি, তবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করা।
অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও সংস্কৃতিই শুধু নয়, বলা হয়ে থাকে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে রাজনীতি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে কেমন ছিল সবকিছুর নিয়ন্ত্রক এই রাজনীতির অবস্থা, তা জানতে ফিরে তাকাতে হবে বছরের শুরুর দিকে।
হরতাল-অবরোধ, সংঘর্ষ-সহিংসতা দিয়ে শুরু হয় ২০১৫ সাল। ৩ জানুয়ারি থেকেই গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনটিকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় ২০-দলীয় জোট ও সরকার।
এরপর ৯২ দিনের সহিংস আন্দোলন, পেট্রলবোমা ও সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ওই আন্দোলন শেষ হয়। দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে নিজ বাসায় যান খালেদা জিয়া।
রাজনীতিতে দুর্বল হয়েছে বিরোধীরা
বিদায় বছরে রাজনীতিতে ঘুরেফিরে আলোচনা হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিশেষ করে আইএস নিয়ে। বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মাঠ থেকে একরকম উঠে যাওয়া, যুদ্ধাপরাধীর দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর কোণঠাসা হয়ে পড়া ও দলটির দুই শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে বছরের বড় সময়জুড়ে আলোচনা হয়েছে।
দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচি ঠেকানোর চেষ্টা করে, আর বিরোধী দল সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে সেই কর্মসূচি পালন করে।
কিন্তু বিদায় বছরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের জন্য সরকার তথা পুলিশের কাছে বিরোধী দলের অনুমতি নেওয়ার বিষয়গুলো রাজনীতিতে ওই দলটির দুর্বল অবস্থান তুলে ধরেছে।
“বিএনপির আন্দোলনের মুরদ নেই ও জনসমর্থন নেই। এ জন্য আন্দোলন করতে পারে না,” বেনারকে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দলটির জনসমর্থন নেই। যার প্রমাণ ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়।
গত বছরে একটি কর্মসূচিও পালন করতে পারেনি বিরোধী দল বা জোট। বিএনপি বা জামায়াত মাঝেমধ্যে কর্মসূচি দিলেও মাঠে ছিল না।
গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিতর্ক
বিদায় বছরে সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের মুখে ঘুরেফিরে ছিল সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার আদলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা। ওই দুটি দেশে নামে গণতন্ত্র থাকলেও কার্যত একদলীয় শাসন চলেছে।
গত ১৬ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সমন্বয়কারী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তবে বেশি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া যে পথে এগিয়ে গেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশেও সে পথে গণতন্ত্র চলবে।”
“রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল কথা হচ্ছে, শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন। গণতন্ত্রের স্বার্থেই শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। বিরোধী দল যত দুর্বল হবে, গণতন্ত্রও ততটা অকার্যকর হবে,” বেনারকে জানান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।
বর্তমান সরকার, বিরোধী দল ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে দিলারা চৌধুরী বলেন, এখনকার সরকার সংসদের বাইরে থাকা বড় বিরোধী দলকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ভেঙে দিতে চাইছে যা গণতন্ত্রের জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। আবার সংসদে যে বিরোধী দল আছে তা সরকারের গৃহপালিত। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুযায়ী এটা বিরোধ দল নয়।
ব্লগারদের ওপর হামলার বছর
২০১৫ সালে ব্লগারদের ওপর একের পর এক হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে ফেরার পথে আততায়ীর হামলায় নিহত হয় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্লগার ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়। মারাত্মক আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদ।
অভিজিৎ রায় বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্লগার যিনি ভিন্ন মত প্রকাশের জন্য খুন হয়। এর আগে প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলা শাহবাগ আন্দোলনের সময়।
অভিজিৎ রায়ের হত্যার পর চলতি বছরে চারজন ব্লগার খুন হন। মার্চে খুন হন ওয়াশিকুর রহমান, মে মাসে অনন্ত বিজয় দাস, আগস্টে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়। অক্টোবর মাসের শেষে ঢাকায় ২টি প্রকাশনা সংস্থায় একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। জাগৃতি নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার মালিক ও লেখক ফয়সাল আরেফীন দীপন তার কার্যালয়ে নৃশংস হত্যার শিকার হন।
বছরের শেষদিন ৩১ ডিসেম্বর আরেক ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। ওই দুই আসামি হলেন ফয়সাল বিন নাইম ও বেদোয়ানুল আজাদ। এ ছাড়া ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বিদেশিরাও ছিলেন হামলার লক্ষ্য
২০১৫ সালে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের ওপর হামলার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে পৃথক হামলায় প্রাণ হারান ২ জন বিদেশি নাগরিক। ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার গুলশানে আততায়ীর হামলায় নিহত হন সিজার তাবেলা নামে এক ইতালীয় নাগরিক। ৩ সেপ্টেম্বর রংপুরে নিহত হন কুনিও হোশি নামে এক জাপানি নাগরিক।
এরপর আরও কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের ওপর হামলা হলেও তারা বেঁচে যান। এ সময়ে বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে বিশ্বের অনেক দেশ। এমনকি হামলার আশঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দল তাদের বাংলাদেশ সফরও বাতিল করে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা
ভিন্ন মতালম্বীদের ওপর একের পর এক হামলার প্রেক্ষাপটে বছরের শেষ দিকে এসে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। গত চারমাসে ১৯টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার শিকার হয়েছেন হিন্দুদের মন্দির, খ্রিষ্টান ধর্মযাজক, বাহাই, শিয়া ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।
অমানবিক নিষ্ঠুরতা
বছরের মাঝামাঝি সময়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার জন্ম দেয়- সিলেটে শিশু রাজন ও খুলনায় রাকিবকে নির্মমভাবে হত্যা। ওই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড মানুষকে নাড়া দিয়েছে বিশেষভাবে। নভেম্বরে এই দুটি হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় দেয় আদালত। এত দ্রুত কোনো মামলার বিচার করাটাও বাংলাদেশের নজিরবিহীন ঘটনা।
তিন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর
২০১৫ সালে ৩ জন মানবতাবিরোধী অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এপ্রিলে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
গত নভেম্বরে একই রাতে জামায়াতের আরেক শীর্ষ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। বছরজুড়ে এই ফাঁসি নিয়ে নানারকম আলোচনা ছিল।
একটি নিখোঁজ সংবাদ
বছরের শুরুতে আন্দোলন চলার সময় কর্মসূচি ঘোষণাকারী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া এবং বছরের মাঝামাঝি সময় তাঁকে ভারতের শিলিগুড়িতে খুঁজে পাওয়ার ঘটনাও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
কিছু সুখবর
২০১৫ সালে হোমগ্রাউন্ডে খেলা একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজের সবকটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের কাছে পরাজিতের তালিকায় রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাক্রমশালী দল।
গত ৬ জুলাই জাতিসংঘ ঘোষিত ১৫ বছর মেয়াদের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে পূরণ করেছে।
বাংলাদেশে বহু বিতর্ক সৃষ্টিকারী মেগা নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর ৬ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ সেতুটির মূল অবকাঠামো নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটির সম্পূর্ণ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার; যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
বিনিয়োগ বন্ধ্যার বছর
সামগ্রিকভাবে ২০১৫ বিনিয়োগ স্থবিরতা আরও প্রকট হওয়ার বছর, মন্দা শেয়ারবাজারের বছর। বিদায়ী বছরটি সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার বছর।
তবে সবচেয়ে বড় স্বস্তি ছিল নিয়ন্ত্রণে থাকা মূল্যস্ফীতি। বাজার এবার খুব বেশি যন্ত্রণা দেয়নি। মাঝেমধ্যে উত্তাপ ছড়ালেও বাজারে আগুন লাগেনি।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ছিল স্বল্প আয়ের দেশ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়।
বছরের শেষে বাংলাদেশের সঙ্গে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ (৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) ঋণ-সহায়তা চুক্তি সই করে জাপান।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত হওয়ার পরও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে চিংড়ি রপ্তানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে কিছু অগ্রগতি
এ বছরের শুরুতেই জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিএনপি জোটের আন্দোলনের সময় দুই শতাধিক মানুষ পেট্রলবোমায় দগ্ধ হন। তাঁদের চিকিৎসা নিশ্চিত করাটাই ছিল কঠিন বিষয়। তবে তা ভালোভাবেই সামলে নেয় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
জুলাইয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মাগুরায় মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশুকে ঘিরে তৈরি হয় নতুন উৎকণ্ঠা। মাগুরা জেলা হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা শিশুটিকে সুস্থ করে তোলেন।
তবে যেকোনো বিবেচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বছর সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয় এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে। ১৮ সেপ্টেম্বর ভর্তি পরীক্ষার এক দিন পর থেকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্নের নমুনা হাতে বিক্ষোভ করেছেন, পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু মন্ত্রণালয় এটা চেপে গেছে বলে অভিযোগ আছে।
তবে অনেক খারাপ খবরের মধ্যেও দারুণ খবর হলো ২৪ ঘণ্টা বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে ১৬২৬৩ এই নম্বরে ডায়াল করে।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাক যুদ্ধ
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল যাচ্ছিল। বিচারের রায় ঘোষণার পর থেকে প্রতিবারই বক্তৃতা–বিবৃতি দিয়ে সম্পর্কটা বিষিয়ে তুলেছে পাকিস্তান।
এ বছর দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতি দেয়। এর জের ধরে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে বাংলাদেশ তলব করে। এর পাল্টা হিসেবে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে পাকিস্তান।
এর সঙ্গে এ বছর জাল মুদ্রা পাচার ও জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে পাকিস্তানের দুই কূটনীতিক ও কর্মকর্তাকে পাকিস্তান ঢাকা থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
এরই মধ্যে গত বুধবার পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনকে যত দ্রুত সম্ভব ঢাকায় ফিরে আসতে নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
উষ্ণ ছিল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো ২০১৫ সালেও অনেক উষ্ণ ছিল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জুনে ঢাকা সফর করেন।
দীর্ঘ ৬৮ বছর পর শেষ হয়েছে ‘ছিটের মানুষ’ নামে পরিচিত দুই দেশের আবদ্ধ মানুষের দুঃসহ যন্ত্রণা।
মানবপাচার নিয়ে হইচই
গত মে মাসে ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগর হয়ে মানবপাচারের ঘটনাগুলো প্রকাশের পর এক মানবিক সমস্যা সামনে চলে আসে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনকে লোভ দেখিয়ে একটি চক্রের পাচারের বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে মোকাবিলার জন্য জুনে ব্যাংককে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াকে নিয়ে আলোচনায় বসতে সফল হয় বাংলাদেশ।
“আমার তো মনে হয়, দেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক আছে,” বেনারকে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, যিনি সরকারের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি।
“গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। দেশের সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হয়েছে। সরকারের গ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও নির্যাতনে বিরোধী দলের নেতা–কর্মীরা অতিষ্ঠ। এর মধ্যে উগ্রপন্থীদের উত্থান আশঙ্কা সৃষ্টি করছে,” বেনারকে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেও সরকার নীরব। এ জন্য সরকারকে মূল্য দিতে হবে।”