বকেয়া কর পরিশোধ করতে ব্র্যাককে আপিল বিভাগের নির্দেশ

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.08.03
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
20160803-BD-Brac620.jpg নারীর ক্ষমতায়নে ব্র্যাকের ভূমিকা দেশে–বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। ফাইল ফটো।
ব্র্যাক ওয়েবসাইট

বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটিকে (ব্র্যাক) ৪০৪ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯২ টাকা বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে।গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ার পর এই রায় দিলেন।

মোট ১১টি করবর্ষে ব্র্যাক এই বিপুল পরিমাণ টাকার কর দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠেছে। মামলার বিবরণে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে ডেপুটি কমিশনার অফ ট্যাক্সেস ওই প্রতিষ্ঠানের ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৪-৯৫, ১৯৯৫-৯৬, ১৯৯৬-৯৭, ২০০৫-০৬, ২০০৬-০৭, ২০০৭-০৮, ২০০৮-০৯, ২০০৯-১০, ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ করবর্ষের জন্য ৪০৪ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯২ টাকা বকেয়া কর হিসাবে নির্ধারণ করে।

ব্র্যাকের সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার মাহবুবুল আলম কবীর বেনারকে বলেন, “কর পরিশোধের জন্য আদালতের এই রায়ের প্রতি ব্র্যাক পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। এতে করে দেশজুড়ে ব্র্যাকের যেসব কর্মসূচি চলছে বা এসব কর্মসূচি থেকে যারা সেবা পাচ্ছেন তাঁদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।”

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে ব্র্যাকের জন্ম। দেশের বাইরে ১১ টি দেশে ব্র্যাক কার্যক্রম চালাচ্ছে। উন্নয়ন সংস্থাটির বার্ষিক ব্যয় প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রতিষ্ঠানটিতে এই মুহূর্তে কর্মরত আছেন প্রায় এক লাখ কর্মী। ব্র্যাকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি।

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ব্র্যাক প্রসঙ্গে বলেছেন, “বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের সামাজিক উন্নয়নে ব্র্যাকের কার্যক্রম সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখেছে।”

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র ঋণ, উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান ও দরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এ ছাড়াও শিক্ষা, অভিবাসন, দক্ষতা উন্নয়ন, সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নে সংস্থাটির বিভিন্ন কর্মসূচি দেশে ও দেশের বাইরে বিস্তার লাভ করেছে।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও আইনগত সহায়তা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কর্মসূচি হিসেবে পরিচিতি।

দীর্ঘ আইনি লড়াই

১৯৯৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১১টি করবর্ষের জন্য কর বিভাগ ব্র্যাকের কাছে বকেয়া কর নির্ধারণ করে।এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাক অ্যাপিলেট কমিশনারের কাছে আপিল করে। অ্যাপিলেট কমিশনার কর কর্তৃপক্ষের পক্ষে রায় দেয়। এরপর ব্র্যাক আপিল ট্রাইবুনালে গেলে ট্রাইবুনালও ব্র্যাকের অপরিশোধিত করের পরিমাণ চারশ কোটি টাকার ওপরে বলে রায় দেয়।

ব্র্যাক সে সময় আলাদাভাবে হাইকোর্টে আরেকটি আবেদন পেশ করে।২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ব্র্যাককে কর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু আপিল বিভাগে রায় বদলে যাওয়ায় এই বিপুল অর্থ পরিশোধ করতে হবে ব্র্যাককে।

ব্র্যাকের বিবৃতি

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্র্যাক একটি লিখিত বিবৃতি দিয়েছে। গণমাধ্যমে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “মাননীয় হাইকোর্ট ২০১৪ সালে দাতব্য সংস্থা হিসেবে ব্র্যাকের সামাজিক উদ্যোগসমূহের আয়কে আয়করের আওতামুক্ত করে রায় দেন।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ব্র্যাক প্রতিষ্ঠিত সামাজিক উদ্যোগ থেকে যে আয় করে, তা আবার সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।

সংস্থাটি জানায়, হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছর কমিশনার অব ট্যাক্সেস মোট ১১টি আপিল করেন। শুনানি শেষে গত বছর চার কিস্তিতে নির্ধারিত আয়করের অর্ধেক ব্র্যাককে দিতে নির্দেশ দেন আদালত।

ব্র্যাক জানিয়েছে, লিভ টু আপিল মঞ্জুরের আগে ও পরে কিছু অর্থ ব্র্যাক পরিশোধ করেছে। এই টাকাও সমন্বয় করার সুযোগ আছে বলে সংস্থাটি মনে করে।

দুই পক্ষের আইনজীবীরা যা বলেন

“আপিল বিভাগের এই রায়ের পর ব্র্যাককে এখন বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে,” রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরদার রাশেদ জাহাঙ্গীর।”

ব্র্যাকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও মো. আসাদুজ্জামান।

“আদালতের রায়ের প্রতি ব্র্যাক শ্রদ্ধাশীল। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর ব্র্যাকের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে,” বেনারকে জানান ব্র্যাকের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।