বর্ধমানের ঘটনায় বাংলাদেশের সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে ভারতের তদন্ত সংস্থার অভিযোগ দাখিল
2015.03.31
আপডেটঃ ৩টা ১০ বিকেল,ইস্টার্ন টাইম, ৩১ মার্চ,২০১৫
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা(এনআইএ) বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় কলকাতার বিশেষ আদালতে সোমবার (৩০মার্চ)বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন জেএমবি’র বিরুদ্ধে ১৬৪ পৃষ্ঠার অভিযোগ পত্র দাখিল করেছে। এতে প্রতিবেশি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করে সেখানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এনআইএ এক প্রেসনোটে জানায়, তারা মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের ৪ জন সহ ৮ জন এখনো গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এনআইএর প্রেসনোটে বলা হয়, “ জেএমবি ভারতের কয়েকটি রাজ্যে তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তার ঘটিয়েছে, নিয়োগ প্রশিক্ষণ ও মৌলবাদে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে।এই নেটওয়ার্ক প্রথমত পশ্চিমবাংলা,আসাম ও ঝাড়খন্ডে বিস্তৃত হয়েছে। মাদ্রাসা ও বিভিন্ন গোপন আস্তানায় তরুনদের জিহাদি আন্দোলনে যুক্ত করে, অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে, যাতে তারা সহিংস কার্যক্রম চালাতে পারে।
এনআইএ কাউন্সেল শ্যামল ঘোষ বিশেষ আদালতে বলেন, “ অভিযুক্তরা আলাদাভাবে বিভিন্ন অপরাধ করেছে, যা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের ১৬,১৭,১৮ ও ২০ ধারায় এবং ভারতীয় দন্ডবিধির ৪১৯,৪২০,৪৬৭ ও ৪৭১-এর আওতায় অপরাধের সামিল”। খবর দি হিন্দুর।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনআইএ এতো কঠিন ভাবে অভিযোগ এনেছে যে প্রসিকিউশনের জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর ক্ষেত্রে কোনো ফাঁক-ফোকর রাখা হয়নি।
দিল্লি হাইকোর্টের ক্রিমিনাল ল’ইয়ার বাবন কুমার শর্মা বেনার নিউজকে বলেন, “ সন্ত্রাসীদের ব্যপারে এনআইএ খুবই যোগ্য সংস্থা। মামলা পরিচালনার সুবিধার্থে এরা কোনো খুঁত রাখেনি, যথাযথভাবে তদন্ত পরিচালনা ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেই তারা চার্জ শীট দাখিল করেছে”।
জেএমবির সম্পর্ক ও ষড়যন্ত্রের ঘটনা সামনে চলে আসে যখন পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলার খাগরাগাছ এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে গত বছর ২ অক্টোবর দূর্ঘটনাক্রমে বোমা বিস্ফোরিত হয়। এই বিস্ফোরণে শাকিল গাজী নামে একজন বাংলাদেশি নিহত হয়, পরে যাকে জেএমবির বোমা তৈরির প্রধান কারিগর বলে চিহ্নিত করা হয়।
বাংলাদেশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, এনআইএ ও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের ঘটনার অগ্রগতিকে তারা স্বাগত জানায় এবং এর ফলেই জেএমবির জড়িত থাকার বিষয়টি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মোহাম্মদ রহমত উল মুনিম বেনার নিউজকে বলেন, “বর্ধমান বিস্ফোরন ঘটনায় ৪জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশির সম্পর্কিত থাকার বিষয়টি ভারত আমাদেরকে জানিয়েছে, আমরা এই ৪ পালিয়ে বেড়ানো সন্দেহভাজন বাংলাদেশির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো”।
গত বছর নভেম্বরে শরদ কুমারের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের এনআইএ কর্মকর্তা অভিযুক্তদের ধরতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করে গেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্তপূর্ণ, যেহেতু দুই দেশই সন্ত্রাসীদের দিক থেকে হুমকির মুখে আছে।
নয়াদিল্লির একজন নেতৃস্থানীয় চিন্তাবিদ ও ওভারসিজ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডঃ জয়ীতা ভট্টাচার্য্য বেনার নিউজকে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এনআইএর চার্জশীট দুদেশের মধ্যে আস্থা বাড়াবে, কোনো প্রকার জোরাতালি ছাড়াই ঘটনার বস্তুনিষ্ঠতার ভিত্তিতে যে অভিযোগ প্রস্তুত করা হয়েছে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে খুবই গভীর সম্পর্ক বিদ্যামান, যা ভৌগলিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বন্ধনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। কোনো সামান্য ব্যাপারে ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব বিনষ্ট হতে পারে না”।
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের জন্য খুবই গুরুত্তপূর্ণ ও জরুরী।ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা ও পারস্পরিক আদান-প্রদানের যে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তাতে বাংলাদেশি যারা অভিযুক্ত তাদের মামলা নিশ্চয়ই সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হবে। ভারত এমন কিছুতে জড়াবে না যাতে দুইদেশের সম্পর্ককে বিনষ্ট করবে”।