মোদীর ঢাকা সফর, দুইদেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি ও কামরান রেজা চৌধুরী
2015.06.08
BD-Ind দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা সেই সঙ্গে পশ্চিম বাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় শনিবার আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে একত্রে মঞ্চে দাঁড়ান। ৬ জুন,২০১৫
এএফপি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুই দিনের বাংলাদেশ সফর গত রোববার শেষ হলো। শেখ হাসিনা ও মোদী উভয় প্রধানমন্ত্রী এই সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিলেন।বিশেষ করে প্রায় ৪০ বছরের ঝুলে থাকা স্থল-সীমান্ত চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় অনেকে উচ্ছাস প্রকাশ করলেও, কোনো কোনো বিশ্লেষক সংযত মনোভাব প্রকাশ করছেন।

দিল্লিতে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত রাজিউল হাসান বেনার নিউজকে বলেন, “আমরা আসলে আশা করেছিলাম তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ঘোষণা আসবে, যা বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি ছিলো, কিন্তু কিছুই হলো না”।

এটা আগে থেকেই পরিস্কার ছিলো যে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না, তবে পশ্চিম বাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বদোপাধ্যায় মোদীর সফর সঙ্গী হওয়ায় একটা প্রত্যাশা জাগে যে তিস্তা চুক্তির একটা দিনক্ষণ ঘোষিত হবে।
২০১১ সালেও মমতা তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে এলে শেষ মুহূর্তে সফর সঙ্গী হতে নিজেকে সরিয়ে রাখেন।

এবার মমতা তার ২৪ ঘন্টা ঢাকা অবস্থান কালে নিশ্চূপ থাকেন, তিস্তার চুক্তি নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়ার ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি।যদিও দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিত থাকেন।

আর সে কারনেই সম্ভবত মোদী একটু দার্শনিক ভাবধারায় ইস্যুটি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক সমাবেশে, যেহেতু সবারই উদ্বেগ ছিলো সেটা নিয়ে।

রোববার দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের আগে সেই সমাবেশে তিনি বললেন, “পানি রাজনৈতিক কোনো ইস্যু হতে পারে না। সমস্যাটি সমাধান করতে হবে মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে”।

তবে মোদীর সফর সঙ্গী হয়ে আসা দি টেলিগ্রাফ পত্রিকার দিল্লি ব্যুরো চীফ দেবদ্বীপ পুরোহিত বলেন, আগের দফা মমতার অবস্থান আর এইবার মমতার অবস্থান এক নয়। বেনার নিউজকে তিনি বলেন, “তিনি এই সফরকালে উপলদ্ধি করতে পেরেছেন, এই ইস্যুটি দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কের জন্য এতো গুরুত্তপূর্ণ যে বাংলাদেশ যদি পানির ন্যায্য হিসসা না পায় তাহলে ভারতের স্বার্থের ক্ষতি হতে পারে”।

তবে অন্যান্য বিশ্লেষকরা বলছেন, তিস্তা চুক্তি ছাড়াই এই সফরকালে ১৯ টি চুক্তি হয়েছে, বিশেষ করে যোগাযোগ,নিরাপত্তা ও এনার্জীর ক্ষেত্রে যা দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শহীদুজ্জামান বলেন, “কিন্তু সব কিছু সত্তেও এইচুক্তিগুলো মনে হচ্ছে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতেকেই লাভবান করাবে।কানেক্টিভিটি চুক্তি ভারতের জন্য বিশাল পাওয়া তার উত্তর-পূর্বাংশের রাজ্যগুলোর সাথে যোগাযোগের ভিত্তি দেবে”।

শনিবার দুদেশের প্রধানমন্ত্রী কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে শিলং ও আগরতলা ২টি রুটে বাস চলাচল যৌথভাবে উদ্বোধন করেন। যা কলকাতার সাথে হাজার মাইলের দুরত্ত অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনবে।

এ ছাড়া ছিটমহল সমস্যার সমাধান হওয়ায় বিরাট অগ্রগতি ঘটে, সেখানকার ৫০ হাজার মানুষের জীবনে সেটা বিশেষ ঘটনা যাদের কোনো রাষ্ট্র পরিচয় নেই।

শহীদুজ্জামান বলেন, “ ভারতের জন্য সেটা অতিরিক্ত লাভ, কারণ তাদের সীমান্ত এখন অধিকতর নিরাপদ হলো”।

অনেক বিশ্লেষকের মতে, বাংলাদেশ কিছুই পায় নি, এই ধারনা সম্ভবত যথার্থ নয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর বেশ কয়েকটি গ্রন্থের লেখক সাবেক রাষ্ট্রদুত হারুন-উর-রশীদ বেনারকে বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির নবায়ণ,উপকুলীয় জাহাজ চলাচল,সমুদ্র নিরাপত্তা, জাল টাকার নোট পাচার রোধ, মানবপাচার বন্ধ করা নিয়ে সকল চুক্তি বাংলাদেশকেই লাভবান করাবে”।

পর্যবেক্ষকদের মতে, সামগ্রিকভাবে এই সফরে  দুইদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে মোদীর আন্তরিকতাই প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে হাসিনা বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিতাড়ণ করার কার্যক্রম হাতে নেবার পর।

সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টি ভারতের জন্য বিরাট ইস্যু, আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, নিরাপত্তার দিকটি মোকাবেলার ব্যাপারে তার উপর তারা আস্থা রাখাতে পারেন”।

হাসিনার নিরাপত্তা প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রশংসা করার ব্যাপারে মোদী মোটেই দ্বিধা করেন নি। বিদায় কালে তার ভাষণে মোদী বলেন, “সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ নেই, কোনো আদর্শ ও সংস্কৃতি নেই। তাদের একমাত্র পরিচয় তারা মানবতার শত্রূ”।



মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।