মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো পেয়ার আহম্মদ অস্ত্র মামলার আসামী
2016.09.23
মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো অস্ত্র ব্যবসায়ীর নাম পেয়ার আহম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭। ফেনী জেলা পুলিশ ও কারাগার সূত্র তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র পাচারে যুক্ত সন্দেহে বাংলাদেশের একজন নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল তাকে ধরিয়ে দিতে রেড নোটিশ জারি করেছিল। তবে মালয়েশিয়া পুলিশ তার নাম প্রকাশ করেনি।
“ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পুলিশের সহযোগিতায় দাগনভূঞা পুলিশ পেয়ার আহম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা থেকে দাগনভূঞা থানায় নেওয়া হয়,” টেলিফোনে বেনারকে জানান ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন।
গত ১৯ আগস্ট মালয়েশিয়ার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মালয়েশিয়ায় রসনা বিলাস নামে তার একটি হোটেল রয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, মালিন্দা এয়ারের একটি ফ্লাইটে ২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় পেয়ার আহম্মদ ঢাকায় পৌঁছায়। তার পাসপোর্ট নম্বর বিসি ০৭৬০৬৬৩।
এদিকে ফেনী জেলা পুলিশ জানায়, জেলার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে পেয়ারের নামে একটি মামলা রয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর তাকে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে আদালত তাকে ফেনী কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ফেনী কারাগারের জেলার শংকর মজুমদার বেনারের কাছে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলতে চাননি।
পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্রের মধ্যে খোয়া যাওয়া একটি একে-৪৭ বিক্রির ঘটনায় ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব পেয়ার আহম্মদ ওরফে আকাশসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত থেকে জামিন পেয়ে পেয়ার মালয়েশিয়া পালিয়ে যায়।
ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। ওই ঘটনায় পুলিশের দুজন সার্জেন্টের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছিল। তাদের নাম সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন ও সার্জেন্ট আলাউদ্দিন। ২০০৪ সালে ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামের সিইউএফএল জেটি ঘাটে অস্ত্র আটকের সময় তারা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।
কে এই পেয়ার আহম্মদ?
মালয়েশিয়ার বুকিত বিনতাং এলাকার রসনা বিলাস নামের একটি রেস্তোরাঁর অন্যতম পরিচালক পেয়ার। রেস্তোরাঁটি ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে।
পেয়ারের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামে। তিনি শাহীন একাডেমি নামে ফেনীর একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ওই স্কুলটি জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত বলে পরিচিত। এলাকায় প্রচার আছে যে, পেয়ার নিজেও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
পেয়ার আহম্মহ ওরফে আকাশ, ফাইল ছবি। নিউজরুম ফটো।
শাহীন একাডেমি থেকে মাধ্যমিক পাস করে পেয়ার চট্টগ্রামের এম ই এস কলেজে ও পরে চট্টগ্রাম কলেজে লেখাপড়া করেন। ফেনীর মহীপালে তার ‘আকাশ টেলিকম’ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল।
পেয়ার আহম্মদের মামা আবদুল কাদের অবশ্য দাবি করেন, তার ভাগ্নে ষড়যন্ত্রের শিকার।
“আকাশ কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সে অস্ত্র মামলায় ফেঁসে যায়। মালয়েশিয়ায়ও সে ব্যবসার অংশীদারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে,” বেনারকে জানান আবদুল কাদের।
পেয়ার ও আন্দালিবের সম্পর্ক নিয়ে বিভ্রান্তি
মালয়েশিয়ার দ্য স্টার অনলাইন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো ওই রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঢাকা হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন এক জঙ্গির নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সন্দেহভাজন ওই জঙ্গির নাম আন্দালিব আহমেদ।
এ বিষয়ে আন্দালিবের বাবা আশরাফউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, “পেয়ার আহ্ম্মদের সঙ্গে আন্দালিবের যোগাযোগ ছিল না। আন্দালিব কোনো জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে জড়িত ছিল না”।
এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফ উদ্দিন আহমদ বলেন, “আন্দালিব আহমেদ মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে পড়তে গিয়েছিল। শেষ সেমিস্টারে পরীক্ষার ফল খারাপ হয়। ছেলে তাঁকে জানায়, ফল খারাপ হওয়ায় ‘ভয়ে’ সে ইস্তাম্বুল যায়।”
আশরাফ উদ্দিন আহমদ আরও জানান, গত ২১ ডিসেম্বর থেকে আন্দালিব বাসাতেই রয়েছে এবং তার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলাকারি নিবরাস ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ছিল কি না জানতে চাইলে আশরাফ বলেন, “একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে পরিচয় হয়। এর বেশি কিছু নয়।”