গুপ্তহত্যায় বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট,প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিত
2016.06.08
সাম্প্রতিক সময়ে গুপ্তহত্যার ঘটনায় বিএনপি–জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট (সরকারপ্রধান)। সব তথ্য নিশ্চয়ই আমার কাছে আছে।”
জাপান, বুলগেরিয়া ও সৌদি আরব সফর শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি এ কথা বলেন। বুধবার সকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনের বক্তৃতায় এবং দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে কথা বলেন।
এই অপরাধে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি যখন এ বক্তব্য দিলেন তখন দেশে বেছে বেছে হত্যা চলছে। গত দুই বছরে এমন হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা অর্ধশত পার হয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম গত রোববার সকালে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়ার পর দেশজুড়ে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ধারণা, জঙ্গিরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কারণ ওই পুলিশ কর্মকর্তা জঙ্গিবিরোধী বেশ কয়েকটি অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
এই অবস্থার মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে দেশে ফিরে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গি জঙ্গিই। সে যে দলেরই হোক, রেহাই পাবে না। এই আশ্বাস আমি দিতে পারি। সরকার বসে নেই, গোয়েন্দা সংস্থাও বসে নেই।”
ধর্মের নামে যারা হত্যা করে, তারা কোনো ধর্মেরই নয়—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, গুপ্তহত্যাকারীদের খুঁজে বের করুন। কারা পরিকল্পনা করছে দেখুন। তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিন। সবাই সচেষ্ট হলে এদের প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন নাম নিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করলেও এদের হত্যার প্রক্রিয়া একই রকম। বাংলাদেশে এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতা আমরা আগেও দেখেছি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে দুটি রাজনৈতিক দলের যোগসূত্র রয়েছে।”
“এখন যারা ওই দুটি রাজনৈতিক দলকে বাঁচাতে চায়, যারা তাদের রক্ষা করতে চায়, তাদের অপকর্মগুলো ঢাকতে চায়, তারাই এ ধরনের প্রশ্ন উঠায়,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেনারকে বলেন, “সরকার বলে আসছে জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবে। প্রকৃতপক্ষে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্বাসযোগ্য কিছু করতে পারেনি। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণেই সবার মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতির সীমানা ক্রমাগতভাবে বিস্তার লাভ করছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “হত্যাকাণ্ডগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত না করেই বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে আরও উৎসাহী হচ্ছে। এ কারণেই দিন দিন খুনের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে”।
বিএনপির ওই নেতার মতে, “দেশব্যাপী এখন টার্গেট কিলিং চলছে। ভিন্নমতাবলম্বী ব্লগার, ধর্মগুরু, পুরোহিত, ধর্মযাজক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষক, বিদেশি নাগরিক, মসজিদের ইমাম, পীর, প্রকাশক, পুলিশ সদস্য ও পুলিশের পরিবার—কেউই রক্ষা পাচ্ছে না। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে উত্তরণের আদৌ কোনো ইচ্ছা সরকারের আছে কি না, তা নিয়ে জনমনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা যখন কথা বলি, মনে রাখবেন অমূলক কথা বলি না। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট। আমার কাছে নিশ্চই সব তথ্য আছে।” এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হয়তো তদন্তের স্বার্থে সব কথা প্রচার করা যাবে না, প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সূত্রটা জানা যায়। আর সেই সূত্র ধরেই আমরা কথা বলি। যারা আড়াল করার কথা বলেন, তারা প্রকৃত জঙ্গিদের রক্ষা করতে চান। জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করতে চান।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে জনরোষে পড়ে কৌশল পাল্টেছে। তারা এখন ‘সফট টার্গেট’ ধরে গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে করণীয় ঠিক করছে। গোয়েন্দা সংস্থাও যথেষ্ট তৎপর রয়েছে অপরাধীদের ধরার জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করলাম, তখন আমাদের কী বলা হয়েছে? কারা তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে? একসময় তারা বাংলা ভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলেছে। কারা ওই সময় পুলিশ প্রহরায় জঙ্গিদের দিয়ে মিছিল করিয়েছে, সেগুলো আপনারা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন?”