রাজন হত্যা: পলাতক আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ
2015.08.24
সিলেটের কুমারগাঁওয়ে কিশোর সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে গত সোমবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত ৮ জুলাই ১৩ বছরের রাজনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাজনের পরিবার।
সিলেটের প্রথম মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক শাহেদুল করিম সোমবার মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজন হত্যার পলাতক তিন আসামি হলেন- সদর উপজেলার শেখপাড়ার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও একই গ্রামের পাভেল আহমদ।
রাজনকে হত্যার পরদিন কামরুল সৌদি আরবে পালিয়ে যান। পরে সেখানে তিনি ধরা পড়েন। বর্তমানে তিনি সৌদি পুলিশের হেফাজতে আছেন।
সিলেট জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বেনারকে বলেন, “গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হলে শুনানির জন্য আজকের (২৪ আগস্ট) তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন আদালত। এদিন সকালে আধা ঘণ্টার শুনানি শেষে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। অভিযুক্ত তিন পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাঁদের মালামাল জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।”
উল্লেখ্য, ঘটনার তদন্ত শেষে ১৩ জনকে আসামি করে এ আদালতে অভিযোগপত্র দেন রাজন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার।
এসময় আসামি পক্ষের কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
আদালতে বাদীপক্ষে পিপি মিসবাহ ছাড়াও রাজনের বাবার নিযুক্ত আইনজীবী শওকত চৌধুরী শুনানিতে অংশ নেন।
গত ৮ জুলাই চুরির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ মো. আজিজুর রহমানের ছেলে সবজি বিক্রেতা কিশোর রাজনকে।
নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের কাছে শেখপাড়ায়। পরে লাশ গুম করার চেষ্টার সময় একজন ধরা পড়ে। এরপরও ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। তবে হত্যাকারীরাই নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সারাদেশে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
অন্য আসামিরা হলেন- কামরুলের ভাই আলী হায়দার, মুহিত আলম, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী।
অভিযোগ পত্রে হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেফতার হওয়া মুহিত আলমের স্ত্রী লিপি বেগম ও শ্যালক ইসমাইল হোসেন আবলুছকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছিল। অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় তাদেরকে আদালত সোমবার মামলা থেকে অব্যাহতির নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র আমলে নেওয়া ও পলাতক আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ ও মামলার কাজ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাজনের বাবা শেখ মো. আজিজুর রহমান।
তিনি বেনারকে বলেন, “শুনেছি আদালত আসামিদের অপরাধ আমলে নিয়েছেন। আবার যেসব আসামি পলাতক আছে তাদের দেশে থাকা সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশও দিয়েছেন। এমন আদেশে আমি খুবই সন্তোষ প্রকাশ করছি। তবে অতিদ্রুত কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ অন্যান্য তিন আসামিকেও গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। আমি চাই আমার সন্তানকে যেভাবে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে সেভাবেই তারা শাস্তি পাক।”
এদিকে মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী-পরিচালক এডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, রাজন হত্যার বিষয়টি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এর বিচার প্রক্রিয়াটিও দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। বিচার ব্যবস্থার জন্য এটি সত্যি ইতিবাচক।
তিনি আরো বলেন, “পলাতক আসামিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। সৌদি আরব থেকে আসামি কামরুলকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে। এদেরকে ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাহলে এদেশের জনগণ সরকারকে কোন রকম ছাড় দেবে না। শিশু রাজন হত্যার বিচারের মাধ্যমে এমন নজির স্থাপণ করতে হবে যাতে আর কোন অপরাধী কোন মায়ের বুক খালি করার সাহস না পায়।”
এদিকে আসামি কামরুলকে ফেরত আনার বিষয়ে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সৌদি সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা কোন উত্তর দেয়নি। আমরা অপেক্ষায় আছি।”