মানবতাবিরোধী অপরাধে একজনের মৃত্যুদণ্ড, দুজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.06.01
BD-Tribunal620.jpg মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান (৬৫), মজিবুর রহমান (৬০) ও আবদুর রাজ্জাককে (৬৩) ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। জুন ১, ২০১৬।
ফোকাস বাংলা

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হবিগঞ্জের মহিবুর রহমানকে (৬৫) মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং তার সহোদর মজিবুর রহমানকে (৬০) আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের চাচাতো ভাই আবদুর রাজ্জাককেও (৬৩) আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, গঠন হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এরা হলেন; মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

আসামির কাঠগড়ায় তিন আসামির উপস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা চারটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে।বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

“আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি। রাষ্ট্রপক্ষের কোনো সাক্ষী ধর্ষণের অভিযোগে আবদুর রাজ্জাকের নাম বলেননি। পূর্ণাঙ্গ রায় বিশ্লেষণ করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব,” বেনারকে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা।

আসামিদের মধ্যে মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। তার ভাই মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এই দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপর আসামি রাজ্জাক গ্রেপ্তার হন গত বছরের ১৯ মে।

চারটি অভিযোগ প্রমাণিত

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ গঠন করার মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন ১২ জন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন সাতজন।

আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ছিল একাত্তরে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করা। এই অভিযোগে মহিবুরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই অপরাধে মজিবুর ও রাজ্জাককে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

বাকি তিনটি অভিযোগে তিন আসামিকে মোট ৩৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন চালান আসামিরা। এই অভিযোগে তাদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

তৃতীয় অভিযোগ ছিল, হবিগঞ্জের খাগাউড়ার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে দুই নারীকে ধর্ষণ করার ঘটনা। এই অভিযোগে তিনজনকেই ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আনছার আলী নামের এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতনের চতুর্থ অভিযোগে তিন আসামিকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের ফলে তিন আসামি যে রাজাকার ছিলেন তা প্রমাণ হল।

ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী কুতুবউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধে স্থানীয় পর্যায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। গতকাল যে তিনজনের সাজা হয়েছে তারা স্থানীয় পর্যায়ের হলেও একাত্তরে তারা জঘন্য অপরাধে জড়িত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।