ব্লগার হত্যায় জড়িত অভিযোগে আনসারুল্লাহ'র ৩ জন আটক

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.11
BD-abt ব্লগার অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘বর্তমান প্রধান’ মো. আবুল বাশারসহ তিনজনকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ১০ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

ব্লগার অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কথিত ‘বর্তমান প্রধান’ মো. আবুল বাশারসহ তিনজন বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হবার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার তাদেরকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত ।

অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় ঢাকার মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে এই আদেশ দেন।

বাশার আনসাররুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানীর ভাই, যিনি এখন জেলে আছেন। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দুজন হলেন- নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য জুলহাস বিশ্বাস ও জাফরান আল হাসান। তাঁরা মিডিয়া সেলের দায়িত্ব পালন করতেন বলে জানায় র‍্যাব। রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে তাদেরকে গ্রফতার করা হয়।  

র‍্যাবের দাবি, জসিম উদ্দিন রাহমানীর অনুপস্থিতিতে বাশারই দলটি পরিচালনা করছিলেন। মূলত ব্লগার হত্যা ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হতো রাহমানীর নির্দেশ অনুযায়ী। আর এসব নির্দেশ আসত তার ছোট ভাই বাশারের মাধ্যমে।


পুলিশ কেবল একতরফা বক্তব্য প্রচার করছে

তবে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গিদের বিষয়ে একতরফা বক্তব্য দেন। কিন্তু অভিযুক্তকে কথা বলার বা তাঁকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয় না বলে সন্দেহ কাটছে না।

“এ ধরনের একপেশে বক্তব্য প্রচার করলে বিভ্রান্তি ও সন্দেহের সুযোগ থাকে,” বেনারকে জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তাঁর মতে, জঙ্গিরা বিক্ষিপ্তভাবে তৎপর আছে বা থাকতে পারে। কিন্তু যেভাবে ঘটনাগুলো প্রচার করা হচ্ছে তাতে কারও কারও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক ফজলুর রহমান তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চেয়েছিলেন।

“তিন আসামির মধ্যে জাফরানের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু বিচারক তা নাকচ করে দেন,” সাংবাদিকদের জানান আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক মাহামুদুর রহমান জানান।


র‍্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ব্লগার হত্যা ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কার্যক্রম পরিচালিত হতো মূলত জসিম উদ্দিন রাহমানীর নির্দেশে। ওই নির্দেশ আসত তার ছোট ভাই বাশারের মাধ্যমে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটালে জুলহাস ও জাফরানের কাজ ছিল বিভিন্ন নামে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করা।”

“গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিরা দুই ব্লগার হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। র‍্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বাশার, জাফরান ও জুলহাস দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছিল। এর আগেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলো,” বেনারকে জানান র‍্যাব-৩-এর পরিচালক লে. কর্নেল গোলাম সারোয়ার।


হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহনকারীরা ধরা পড়েনি

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষককেন্দ্রে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

আর গত ১২ মে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একইভাবে খুন হন ব্লগার ও সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ।

এ দুই হত্যাকাণ্ডে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত থাকতে পারে বলে শুরু থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

“গ্রেপ্তার হওয়া আসামীদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রমজান ওরফে সিয়াম ও নাঈম নামে দুজন ব্লগার অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে,” বেনারকে জানান র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলম।

তিনি বলেন, খুব শিগগির চাঞ্চল্যকর এই দুটি হত্যা মামলার জট খুলবে।

র‍্যাবের দাবি, অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডে মোট পাঁচ জনের একটি দল অংশ নিয়েছিল এবং আড়াই মাস পর তারাই সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যা করে।

এই দলের সদস্য সন্দেহে তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, আরিফুল ইসলাম, জাকিরুল প্রকাশ ও সাদেক আলিম মিঠু নামের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের দুই মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এদের মধ্যে তৌহিদুর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক, যাকে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।






মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।