সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রণালয় দিয়ে কাছে টানলেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.07.16
BD-ashraf গত ৯ জুলাই দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার পর সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের ইফতার মাহফিলে বক্তৃতা করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
বেনার নিউজ

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে কোনোভাবে দূরে ঠেলে দিতে চাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ ছেড়ে তিনি যখন লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনই দলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফকে গতকাল বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের মধ্যে কার রাজনৈতিক বিজয় হলো তা নিয়ে জল্পনা–কল্পনা শুরু হয়েছে। তবে দলের নেতা–কর্মীরা বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান হওয়ায় বেশ খুশি।

“বিষয়টি কেন, কীভাবে ঘটেছে—সেই আলোচনায় আমরা যেতে চাই না। আমরা দেখছি একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধান। দলের নেতা–কর্মীরা এতে খুশি,” বেনারকে জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, যিনি মন্ত্রিসভায় সড়ক ও জনপথ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

গত ৯ জুলাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। এরপর থেকে সৈয়দ আশরাফের মন্ত্রিসভা ও দলের দায়িত্বে থাকা না-থাকা নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন শোনা যায়।

এর পাশাপাশি ভাইয়ের বিয়েতে যোগ দিতে ১৫ জুলাই সৈয়দ আশরাফের লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরপর চার দিন দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হওয়ায় দলের ওই শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরে আসার আভাস পাচ্ছিলেন রাজনৈতিক নেতারা।

“আশরাফ ভাই আমার নেতা, দলের সাধারণ সম্পাদক, তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাই না,” এ বিষয়ে গত কয়েক দিনের চলমান ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বেনারকে বলেন জাহাঙ্গীর কবীর নানক, যিনি আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।  

গত ৭ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উত্থাপনের জন্য আটটি প্রকল্পের তালিকায় প্রথমেই ছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভায় বলেন, ছয় হাজার কোটি টাকার এত বড় প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দুজন মন্ত্রী রয়েছেন, একজনও আসেননি। তাই এ প্রকল্প একনেক সভা থেকে প্রত্যাহার করা হোক।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঠিক আছে, মনে করেন আমিই মন্ত্রী। প্রকল্পটা প্রত্যাহার করবেন না।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঠিক আছে, উনি (সৈয়দ আশরাফ) যখন মিটিংয়ে আসেন না, আমি উনাকে সরিয়ে (চেঞ্জ করে) দিচ্ছি। এখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আছেন, আজকেই চেঞ্জ করতে বলব।’

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুলাই দলের সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। এর আগে ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর আরেক সহচর তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সরকার বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়।

এদিকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে জনপ্রশাসন করার পর আশরাফই এই দপ্তরের প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী। এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী প্রয়াত এ এইচ এস কে সাদেকের স্ত্রী ইসমত আরা সাদেক।

বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ যেই সরকার গঠন করুক না কেন, দলের সাধারণ সম্পাদকই এত দিন ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে আসছিলো।

তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ওই মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছিলো আশরাফকে। এরপর প্রায় সাড়ে ছয় বছর আশরাফ গুরুত্বপূর্ণ ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও মন্ত্রণালয়ে তাঁর সময় না দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ওঠে।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনার বন্দী হওয়া এবং প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার উল্টোযাত্রার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দলীয় সভানেত্রীর পূর্ণ আস্থা অর্জন করেন আশরাফ।

এ ছাড়া বিডিআর বিদ্রোহ, হেফাজতের উত্থান সামাল দেওয়া এবং বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে আশরাফের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আওয়ামী লীগে আলোচিত।

সেই আশরাফকে আকস্মিকভাবে শেখ হাসিনা দপ্তর ছাড়া করার পর আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। বিশেষ করে তাঁর সততা নিয়ে এ পর্যন্ত প্রশ্ন তোলেনি কেউ।

“আশরাফ দলে খুবই জনপ্রিয়। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এটি তাঁর বড় গুণ,” গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যিনি ৯ জুলাই একনেক সভায় অনুপস্থিত থাকায় আশরাফের সমালোচনা করেছিলেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।