ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে আগের চেষ্টা সফল হয়নি, নতুন উদ্যোগ শুরু

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.03.02
BD-beggar দেশে ভিক্ষুক পুনর্বাসন নিয়ে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হচ্ছে না।
বেনার নিউজ

দেশে ভিক্ষুক পুনর্বাসন নিয়ে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হচ্ছে না। সরকার চাইলেও নানামুখী বাস্তবতার কারণে রাস্তাঘাটে ভিক্ষুকের উপদ্রব থেকেই যাচ্ছে।
গত ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবস ও সমাজসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। সরকারের তরফ থেকে ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষদের  বিনা খরচে পুনর্বাসন করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পরপরই ‘ভিক্ষুক পুনর্বাসন’  কার্যক্রম কিছুটা গতি পেয়েছে। তবে এটা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
“আমি তো আর চুরিচামারী করছি না, যার আছে তার কাছ থেকে চেয়ে নিচ্ছি।“ বেনারকে জানান আফিয়া খাতুন, যিনি ভিক্ষা করছিলেন রাজধানীর হাতিরপুল কাচাবাজার মোড়ে।
আফিয়া জানান,  পুনর্বাসনের অনেক আশ্বাস তিনি গত ২০ বছরে শুনেছেন। কিন্ত ভিক্ষা ছাড়লে জীবন ঠিকমতো চলবে এমন ভরসা পাননি।
একটি বাড়ি একটি খামারে  ভিক্ষুকেরা অন্তর্ভূক্ত
গত ২৪ জানুয়ারি  ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী ভিক্ষুক ও দরিদ্র পরিবারের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, এক অঞ্চলের ভিক্ষুক অন্য অঞ্চলে ভাসমান অবস্থায় থাকে বলে তাদের স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রকল্পের আওতায় এ ধরনের ভাসমানদেরও পুনর্বাসন করা হবে।
প্রকৃত ভিক্ষুকদের নাম তালিকাভুক্তির জন্য প্রকল্পের উপজেলা কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা করার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’।
ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে সরকারের প্রকল্প
২০১০ সাল থেকেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ শীর্ষক কর্মসূচি পরিচালনা করছিল। এ কর্মসূচি মাঝপথে থমকে যায়। এখন সেটি আবার ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারের ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত বাজেটে প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বরাদ্দ ছিল। অর্থ ছাড় করা হয়েছে ১২ কোটি টাকার বেশি। তবে গত দুই অর্থ বছরে এ কর্মসূচির আওতায় সেই অর্থে কোনো কার্যক্রম হয়নি।
এ কর্মসূচিটর আওতায় অবকাঠামো, জনবল কিছুই নেই। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতিও নেই। তবে ওই কর্মসূচির আওতায় ঢাকা শহরে ১০টি বেসরকারি সংগঠনের সহায়তায় ভিক্ষুক জরিপে ১০ হাজার ভিক্ষুকের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছিল।
সেই জরিপ অনুযায়ী, ৮০ দশমিক ৪৮ শতাংশ নিজ জেলায় পুনর্বাসন করা হলে এবং ৯৩ শতাংশ সরকারের সহায়তা পেলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিল।
ওই জরিপ অনুযায়ী, ১০ হাজার ভিক্ষুকের মধ্যে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ভিক্ষুকের সংখ্যা ছিল ১০ শতাংশ । এদের প্রাথমিক ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। অন্যদের নারী, পুরুষ, প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন করার কথা ছিল।
ভিক্ষুক আছে, ভিক্ষুক নেই
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশে কোনো ভিক্ষুক নেই। এ জন্য বাজেটে ভিক্ষুক পুনর্বাসনে বরাদ্দ রাখা হয়নি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর গত ছয়টি বাজেটে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ রাখতাম। কিন্তু এবারের বাজেটে কোনো বরাদ্দ রাখিনি। শহরের রাস্তাঘাটে কিছু ভিক্ষুক দেখতে পাবেন। এরা চরিত্রগতভাবে ভিক্ষুক। এদের রাজবাড়ি বানিয়ে দিলেও ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়বে না।”
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নূরুল কবির জানালেন,  “প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ভিক্ষুক ও ভাসমান পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের বিষয়টি ঢেলে সাজানো হচ্ছে।“
তবে তিনিও বলেন, “প্রকৃত অর্থে দেশে কোনো ভিক্ষুক নেই। বেশিরভাগ শখের ভিক্ষুক।"
একটি থানার চিত্র
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নাই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ উপখাতের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ভিক্ষুকদের জন্য ১৫টি ঘর তৈরির জন্য ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে আটটি উপজেলার মধ্যে চলতি মাসে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কাজের আওতায় ১০টি ঘর তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। ৫০টি ঘর তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এ উপজেলায় ভিক্ষুক আছে মোট ৯৫১ জন।
“একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সহায়তায় পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় শতভাগ ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হবে,” জানান প্রকল্পের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।