বিজয় দিবসে এবার জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কোটি কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.11
BD-bijoy বাংলাদেশের ৪৫তম বিজয় দিবসে কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠে বেজে উঠবে জাতীয় সংগীত।
বেনার নিউজ

বাংলাদেশের ৪৫তম বিজয় দিবসে কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠে বেজে উঠবে জাতীয় সংগীত। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে এই ‘কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের’ ডাক দিয়েছে ‘বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের মত চলমান বিষয়ের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে এ ধরনের আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা। তবে এ প্রতিরোধ যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতায় আবদ্ধ না হয়, সে বিষয়টির প্রতিও নজর দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।

আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে সারা দেশে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে। যার কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হবে স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে অভিনব এই অনুষ্ঠানের কথা জানান বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ইমরান এইচ সরকার।

লিখিত বক্তব্যে গণজাগরণমঞ্চের এই মুখপাত্র বলেন, "বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে আত্মসমর্পণ করেছিল। ২০১৩ সাল থেকে ঠিক এ সময়েই সারা দেশসহ বিশ্বব্যাপী লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিজয়ের উৎসবকে আগামীর প্রত্যয়ে পরিণত করে আসছে জাতীয় কমিটি।"

সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-গ্রামসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান ইমরান।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সমবেত হয়ে প্রায় তিন লাখ মানুষ একযোগে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। আনুষ্ঠানিক ভাবে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন সম্মিলিত কণ্ঠে মূল অনুষ্ঠানস্থলে গানটি গায়। তবে এর বাইরে হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়।


‘জাতীয় সঙ্গীতের পবিত্র সুরে প্রতিহত হবে মৌলবাদ’

ইমরান এইচ সরকার বলেন, “এবার কেবল লাখো কণ্ঠে নয়, কোটি কণ্ঠে বিশ্বব্যাপী জাতীয় সংগীত গাইবেন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিকামী সকল মানুষ। জাতীয় সংগীতের পবিত্র সুরে বিশ্বব্যাপী প্রতিহত করবেন যুদ্ধাপরাধ, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদী অপশক্তিকে; শপথ নেবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্যে।”

ইমরান এইচ সরকার বলেন, "স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছরে বাংলাদেশ যেমন সামনে এগিয়ে এসেছে, তেমনি ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তির হিংস্র থাবা’ বারবার আক্রান্ত করেছে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রতিক ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একদিকে একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে, তেমনি একাত্তরের মতোই মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি স্বাধীনতার স্বপক্ষের লেখক-প্রকাশকসহ মুক্তচিন্তক মানুষদের হত্যা করছে। তাই এবার আরও সাহসী, আরও প্রাণবন্তভাবে দেশবাসীকে বিজয় দিবস উদযাপন জানাচ্ছি।”


‘প্রশংসনীয়, তবে আনুষ্ঠানিকতায় আবদ্ধ রাখা যাবে না’

এ বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির খান বেনারকে বলেন, এধরনের সচেতনতামূলক আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। এর মাধ্যমে  জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে জনগনের সম্পৃক্ততা বাড়বে। তবে মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ একটা চলমান আন্দোলন। সাময়িক দু’একটা ইভেন্ট আয়োজন করে বিষয়টাকে শুধু আনুষ্ঠানিকতায় আবদ্ধ রাখলে ভবিষ্যতে এই আন্দোলনের গ্রহনযোগ্যতা কমে যাবে। তাই আশা করব, এ ধরনের আয়োজন চলমান থাকবে।’


আয়োজনে যা যা থাকছে

‘বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’র সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, ১৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারের বিজয় উৎসবের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধন করবেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘আমাদের সংস্কৃতি’।

এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব। বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে হবে ‘আগামী বাংলাদেশের শপথ’। শপথবাক্য পড়াবেন বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরী।

বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিট থেকে ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধের গান। এরপর আছে ‘বিজয় আতশ সন্ধ্যা’। সবশেষে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিজয় মঞ্চে হবে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলের অংশগ্রহণে ‘কনসার্ট ফর ফ্রিডম’।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।