আনসারুল্লাহ’র পাঁচ সদস্যকে আসামি করে ওয়াশিকুর হত্যা মামলার অভিযোগপত্র

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.09.01
BD-blogger ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান হত্যার আসামি আরিফুল ইসলাম ও জিকরুল্লাহ। হত্যাকাণ্ডের পরপরই স্থানীয় দু’জন হিজড়া তাদের ধরে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। ৩১ মার্চ,২০১৫
বেনার নিউজ

ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার পাঁচজনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযুক্ত পাঁচজনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য, যাদের তিনজন কারাগারে আটক রয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

গত ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে খুন হন ওয়াশিকুর রহমান। তিনি ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে।

ঘটনার দিনই জিকরুল্লাহ, আরিফুল, আবু তাহের এবং মাসুম নামের আরেকজনকে আসামি করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন নিহতের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।

গত তিন বছরে এ পর্যন্ত পাঁচজন ব্লগার হত্যা হলেও এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয় ব্লগার হত্যা মামলা আদালত পর্যন্ত গড়াল। এর আগে ২০১৪ সালে ব্লগার রাজীব হত্যার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ২০১৩ সালে খুন হওয়া রাজীবের মামলাটি এখনো বিচারাধীন আছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, “আনসারুল্লাহ বাংলাটিমেরে সদস্য আরিফুল ইসলাম, জিকরুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, জুনায়েদ ওরফে তাহের এবং হাসিব ওরফে আব্দুল্লাহকে আসামি করে মঙ্গলবার দুপুরে ওয়াশিকুর হত্যা মামলার অভিযোগপত্রটি মহানগর হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। অভিযোগপত্রে মোট ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।”

অভিযুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে আরিফুল ইসলাম ও জিকরুল্লাহকে হত্যাকাণ্ডের পরপরই স্থানীয় দু’জন হিজড়া ধরে ফেলে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। আর হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সাইফুলকে আটক করে পুলিশ। পরে ওয়াশিকুর হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পরপরই ধরা পড়া দুই আসামি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।”

অভিযোগপত্রে নাম আসা বাকি দুই আসামি জুনায়েদ ওরফে তাহের এবং হাসিব ওরফে আব্দুল্লাহ এখনো পলাতক। এর মধ্যে আব্দুল্লাহ হত্যার পুরো পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছিল বলে পুলিশের দাবি।

তবে ওয়াশিকুর হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আরও দুইজনের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই দুইজনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর সম্পূরক চার্জশিটে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”
তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, আনসারুল্লাহ টিমের আরো তিন সদস্য মাসুম ওরফে ইকবাল হাদি (৩০), শরীফ (৩২) ও আবরারের (২৫) বিরুদ্ধেও তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত তাদের ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


অভিযোগপত্র দাখিলে সন্তোষ প্রকাশ

ঘটনার পরপরই আসামিদের দুজনকে ধরিয়ে দেয়ার পর দীর্ঘ দিনেও ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনতে পারার জন্য নানা সমালোচনা ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তারা অভিযোগ পত্র জমা দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক সাব্বির খান বেনারকে বলেন, “ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যায় ৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে, এটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে ওয়াশিকুরের আসামি ধরতে দুইজন হিজড়ার কৃতিত্ব অবশ্যই মনে রাখতে হবে”।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচজন ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও জঙ্গি-মৌলবাদীদের দ্বারা আরো কিছু হত্যাকান্ড এবং কুপিয়ে জখম করার ঘটনাও ঘটেছে। যেগুলোর কোন কুলকিনারা আজও হয়নি। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত অনেকেই সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতাদের সরাসরি হস্তক্ষেপে জামিন পেয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি দুঃখজনক।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।