সন্ত্রস্ত বাংলাদেশের ব্লগারদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ

বেনার নিউজ প্রতিবেদন
2015.12.22
BD-blogger হত্যাকান্ডে নিহত ব্লগার নীলাদ্রি চট্টপাধ্যায়ের মরদেহ তার ঢাকার বাসা থেকে সরানো হচ্ছে। আগষ্ট ৭,২০১৫
এএফপি

মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক একটি জোট যুক্তরাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশি লেখকদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। গতকাল ২১ ডিসেম্বর সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে দেওয়া এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। উল্লেখ্য এ বছর বাংলাদেশে প্রকাশক সহ ৫ জন ব্লগারকে ইসলামি জঙ্গিরা হত্যা করেছে।

তারা কেরিকে লেখা আবেদনে যারা ‘বিচারহীনতা ও বৈরি পরিবেশে’ বাস করছেন তাদেরকে ‘মানবতার আশ্রয়’ দিতে অনুরোধ জানান।
এতে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশের অসংখ্য ব্লগারদের কাছ থেকে আমরা  অনুরোধ পেয়েছি তারা লিখে জানিয়েছেন এই আশায় যে কোথাও তাদের আশ্রয় খুঁজে দিয়ে যেন সাহায্য করি”।

এতে সাক্ষর করেছে পেন নামের পিইএন আমেরিকান সেন্টার, ফ্রিডম হাউস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসসহ আটটি মানবাধিকার সংগঠন। হিউম্যান রাইট ওয়াচের এশিয় পরিচালক ব্র্যাড আদমস ও পেনের নির্বাহী পরিচালক সুজান নোসেল যারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ভুমিকা নিয়ে থাকেন।

আবেদনে তারা আরো লিখেছেন, “বেসরকারী সংস্থা হিসেবে আমরা কোনো আইনি উপদেশ দিতে পারি না এবং কারো জন্যে ভিসার ব্যবস্থা করতে পারি না। আর তাই আমরা আপনার কাছে লিখছি সেখানে কি অবস্থা বিরাজ করছে তা জানিয়ে এবং একটা মানবিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে তাদেরকে মৃত্যুর হুমকি থেকে রক্ষা করতে”।

কোনো দেশে হুমকির মুখে পড়া এবং জরুরি অবস্থার মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের সাধারণত বিশেষ এ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়।


ঘাতকরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে

বাংলাদেশে এবছর ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ জন ব্লগার এবং একজন প্রকাশককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এবং লেখক-বুধিজীবীদের ই-মেইলে, ফোনে বা মেসেজ দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে সেই সঙ্গে হুমকির তালিকা চিঠি দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে।

সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, বরং তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে দেশ ছেড়ে বিদেশে পারি দেয়ার জন্য, চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

বলা হয়, “ উলটো ইসলামি জঙ্গিদের পরোক্ষ সহায়তা দিচ্ছে সরকার যখন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে অতীতে ব্লগারদের গ্রেফতার করা হয়”।

“কিছু সন্দেহভাজনকে আটক করা হলেও বেশকিছু আক্রমনকারী জঙ্গি যারা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর আঘাত হানছে এবং কিছু বিদেশিকে হত্যা করেছে তারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, এতে বিচারহীনতার পরিবেশে সেকুলার ব্লগারদের অনেকে বৈরি অবস্থা ও ভীতিকর অবস্থার মধ্যে পরে লেখালেখি বন্ধ রেখে নিজেদের লুকিয়ে রাখছে”।


বিচারহীনতা

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার সময় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে। সে সময় তার স্ত্রী রাফিদা বন্যা আহমেদকেও মারাত্নকভাবে আঘাত করা হয়, ঘটনাক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

‘টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশন’ আয়োজিত ওয়াশিংটন ডিসিতে নভেম্বরের শেষে বন্যা আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটস কমিশনের এক শুনানীতে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রন পান।

সেখানে বন্যা আহমেদ  বলেন, “ বাংলাদেশে এই সময়ে হত্যাকান্ড নিয়মিত ঘটনা হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই ইসলামী সন্ত্রাসীরা সেকুলার ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে হত্যা করছে। এবং তা প্রকাশ্যে হাজার হাজার মানুষের সামনে এমনকি বাসায় ও অফিসে”।

অভিজিত ছাড়াও একই রকম আক্রমনে ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন অনন্ত দাস, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নীলাদ্রি চট্টপাধ্যায় এবং ফয়সল আরেফিন দিপন। এছাড়া প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিম আক্রমনের মুখে মারাত্নকভাবে আহত হন।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেকুলার কর্মি ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যা দিয়ে শুরু হয়। এইসব হামলার দায় স্বীকার করেছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আল-কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।