বিএনপির ভাঙন নিয়ে রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.07.20
BD-bnp বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ঈদ-উল ফিতরের দিন দলীয় নেতা-কর্মি ও কূটনীতিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ১৮ জুলাই,২০১৫
বেনার নিউজ

দীর্ঘদিন নিরুত্তাপ থাকার পর সাম্প্রতিককালে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিকে ভাঙ্গা না-ভাঙ্গা নিয়ে।

দলে ভাঙন ধরানোর জন্য আবারও চেষ্টা চলছে—বিএনপি এমন অভিযোগ করলেও জবাবে সরকার বলছে, এমন কোনো চেষ্টা তাঁদের নেই। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ যেমন চলছে, তেমনি একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা লক্ষ্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সরকারের চেষ্টার মধ্যে এখন বিএনপিকে ভাঙতে সরকার তৎপর বলে অভিযোগ উঠছে।

এমনকি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপির জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার দলটিকে শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন এজেন্সি ও সংস্থাকে দিয়ে বিএনপির বিভেদ, অনৈক্য ও দুর্বলতা নিয়ে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে।


“ভাঙন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা হয়তো একটি মোক্ষম সময় এবং সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। তাঁরা মনে করছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা জমে আছে। এ হতাশা আরও চরমে তুলতে পারলে ভাঙন প্রক্রিয়া সফল হবে,” বেনারকে জানান বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করতেও সরকার নীলনকশা করছে। সরকার যদি এ ধরনের নীলনকশার বাস্তবায়ন করে তাহলে এর পরিণাম তাদের জন্য কখনো শুভ হবে না।”

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে ভাঙন প্রক্রিয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এই চেষ্টা করার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যদিও সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।   

“বিএনপি যদি কখনো ভাঙে বা ওই দলে যদি ভাঙনের সুর বাজে সেটির জন্য বিএনপির নেতাদের অন্তর্কলহই দায়ী,” বেনারকে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাদের মনে করেন, সরকার স্বস্তিতে দেশ চালাচ্ছে। সরকারের জন্য এই মুহূর্তে বিএনপি অস্বস্তির কারণ নয়। কাজেই ক্ষমতায় থাকার জন্য কোনো দলকে ভাঙার গরজ সরকারের নেই।

দেশের রাজনীতিতে দল ভাঙার উদ্যোগ বা অভিযোগ নতুন নয়। সেনা–সমর্থিত সব সরকারই বিএনপি বা আওয়ামী লীগকে ভাঙার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অতীতে যাঁরাই দল ভেঙেছেন, তাঁরা কেউই টিকতে পারেননি। হয় দলে ফিরে এসেছেন, না হয় সম্পূর্ণ একা হয়ে গেছেন।

এর আগে প্রয়াত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে দিয়ে বিএনপির কমিটি করা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্ট–বিএনএফ নামে একটি সংগঠন গড়ে বিএনপি ভাঙার চেষ্টা হয়।আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতেও দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাতে মূল দলের কোনো ক্ষতি হয়নি।

“সরকার যখন ভেতরে-ভেতরে ক্ষয়ে যায়, তখন সরকারের পথ থাকে একটাই। অত্যাচার-নির্যাতন আর দল ভাঙা। এতে মূল স্রোতের কোনো ক্ষতি হবে না, অতীতেও হয়নি,” বেনারকে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম।

সরকারের চাপের মুখে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মূল দল বিএনপির মধ্যে। জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে যখন বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে, তখনই জোটভুক্ত দলগুলো নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

“একটি তোড়ায় অনেক ধরনের ফুল থাকে। সব ধরনের ফুল মিলে যেমন সুন্দর একটি তোড়া হয়েছে, তেমন ২০টি দল নিয়ে একটি জোট। তোড়া থেকে একটি ফুল টেনে নিলেই এর সৌন্দর্য নষ্ট হবে না,” বেনারকে জানান শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক।

“বিএনপি একটি আদর্শের নাম। একটি বিশ্বাসের নাম। যারা বিএনপিকে ভাঙার স্বপ্ন দেখুক বা ভাঙার চেষ্টা করুক না কেন তারা কখনই সফল হবে না,” সম্প্রতি একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখায় উল্লেখ করেন মেজর অব. মো. আখতারুজ্জামান, যিনি বিএনপির সাবেক সাংসদ হলেও পরবর্তীতে ওই দল থেকে বহিষ্কার হন।

তাঁর মতে, বিএনপি ধ্বংস হবে না, হতে পারে না। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে ষড়যন্ত্র করে ধ্বংস করা যায় না।

“ক্ষমতায় থাকতেও বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, ৪১ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। একইভাবে এখন আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি সম্পর্কে এমন কথা বলছেন, যা দুঃখজনক এবং গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা,” জানান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।


দল পুনর্গঠনের চেষ্টা

ঈদের রেশ কাটিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে চায় বিএনপি। আপাতত দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, মতবিনিময়, দল পুনর্গঠন— এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চায় দলটি। তবে দল পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে শুরু করতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছয় মাস পর সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। চিকিৎসার জন্য আগামী ২৫ জুলাই তাঁর বিদেশে যাওয়ার কথা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। চিকিৎসা শেষে কবে নাগাদ ফিরবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। এর বাইরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকে এখনো আত্মগোপনে, অনেকে অসুস্থ। এ অবস্থায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে সচল করা, বিশেষ করে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

“এখন দল গোছানোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যোগ্য লোকদের যোগ্য জায়গায় নেওয়া গেলে ভবিষ্যতে আন্দোলন সফল হবে। পুনর্গঠন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে,” বেনারকে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।