কলেবর বাড়লো মন্ত্রীসভার, ৫ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর বন্টন

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.07.14
BD-cabinet মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। ১৪ জুলাই,২০১৫
বেনার নিউজ

কলেবর বাড়লো বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ওই মন্ত্রিসভায় তিনজন নতুন মুখ যোগ হল। এছাড়া পুরোনো দুজন প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নতুন দায়িত্ব পাওয়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান।

এর পরপরই মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ নতুন পাঁচ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর বণ্টণ করে প্রজ্ঞাপণ জারি করে।

পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এ ছাড়া নতুন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ তারানা হালিম ও লালমনিরহাটের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ।

মন্ত্রিসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ছিলনা। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে রাখা হয়।
মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আনলেও পুরনো কাউকে বাদ দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারো দপ্তরও বদলানো হয়নি।

নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টণে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। এর ফলে ভার কমল স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর। নুরুজ্জামান পেয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব, যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কামরুল ইসলাম সম্প্রতি ব্রাজিল থেকে গম আমদানি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারানা হালিমকে। সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেওয়ার পর এই মন্ত্রণালয়ে গত নয় মাস ধরে কোনো মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী ছিল না।

এছাড়া প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হওয়া আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং ইয়াফেস ওসমানের দপ্তরের বদল হয়নি। কামাল এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন ইয়াফেস ওসমান।

এদিকে হঠাৎ করে মন্ত্রিসভার এ কলেবর বাড়ানোকে ‘ইতিবাচক’ মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। বিতর্কিত মন্ত্রীদের বাদ না দিয়ে নতুন সদস্য যোগ করায় সরকারের সমালোচনাও করেছেন অনেকে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বেনারকে বলেন, মন্ত্রিসভার আকার বাড়ল ঠিকই, কিন্তু এতে `সিগনিফিকেন্ট’ কিছু দেখতে পাচ্ছি না। মন্ত্রিসভা পুনর্বণ্টণ হলেও একটা কথা ছিল। সেটা করা হয়নি। এছাড়া ইতোমধ্যে যেসকল মন্ত্রী বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন; যাদের বাদ দেওয়া অত্যন্ত দরকার ছিল, তাদেরকে বাদও দেওয়া হল না। তাই শুধু আকার বাড়ানোতে কোন কৃতিত্ব নেই বলে আমি মনে করি।”

তবে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে সরিয়ে নেওয়ার পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেওয়ার পর খালি হয়ে যাওয়া ডাক যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী দেওয়াকে ‘প্রয়োজনীয়’ বলে উল্লেখ করেন টিআইবি'র ট্রাস্টি বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন।
বেশ কিছুদিন ধরেই মন্ত্রিসভার ‘কিছুটা পরিবর্তনের’ খবর পাওয়া যাচ্ছিল।

গত ৯ জুলাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করে খন্দকার মোশাররফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরে ‘আরো পরিবর্তন আসছে’ বলে আভাস দেন মন্ত্রীরা। তার কয়েকদিন পরেই মন্ত্রিসভার এই আকার বাড়ানো হল।

দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতিক্রিয়া

নিজ নিজ মেধা, সততা ও মূল্যবোধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। শপথ নেওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা জানান।

প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, “দেশ ও জাতিকে কিছু দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, জনগণকে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করব। এ কাজে বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না। তিন বছর যথেষ্ট সময়। তিন বছরে ভালো মতো এগিয়ে যেতে পারব বলে আশা করছি।”

ডাক ও টেলি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, “এটা নারীর ক্ষমতায়নের বিজয়। প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে আমার শ্রম, মেধা, শিক্ষা সব কিছু দিয়ে জনগণের সেবা করার চেষ্টা করব। তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেননি, এটা প্রমাণ করতে চাই।”
নুরুজ্জামান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সফলতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করব। সচেতনভাবে এবং সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চাই।”

প্রতিমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী হওয়া ইয়াফেস ওসমান বলেন, “অনুভূতি সেই আগের মতই। আগেও সিনসিয়ারলি কাজ করেছি, এখনও করব।”

আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিলাম, আগে যা করেছি, এখনও তাই করব। শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমার ছায়ার মতো সঙ্গে ছিলেন। এখনও তিনি আমাকে গাইডলাইন দেবেন।”


নতুনদের পরিচিতি

নতুন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনি সানোয়ারা গ্রুপেরও মালিক। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরোধী শিবিরের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি নৌকা প্রতীকে বন্দর নগরীর একটি আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে দশম সংসদ নির্বাচনে প্রধানন্ত্রীর নির্দেশে ওই আসনটি মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দেন তিনি। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দলের প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করে দলের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত এ নেতা সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বিশেষ নজরে ছিলেন। তারই পুরষ্কার হিসেবে টেকনোক্রেট কোটায় তাকে মন্ত্রী করা হল।

তারানা হালিম

নব্য দায়িত্ব পাওয়া প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার আত্মীয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৈশোরেই পরিচিতি পাওয়ার পর তারানা হালিম অভিনেত্রী হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এনিয়ে দ্বিতীয়বার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

নুরুজ্জামান আহমেদ

নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট-২ আসন থেকে এবারই প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার জন্ম ১৯৫০ সালের ৩ জানুয়ারি। স্নাতক ডিগ্রিধারী নুরুজ্জামান উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ।

নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর শপথের পর বর্তমান মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩২ জনে আর প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা ২০ জন। এছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ দূত ও পাঁচজন উপদেষ্টা এবং দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি তার নেতৃত্বে শপথ নেয় নতুন মন্ত্রিসভা। যাতে বাদ পড়েন অধিকাংশ পুরোনো মন্ত্রী। অপেক্ষাকৃত নতুন ও আগের সরকারের সময় দলের বাদ পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের স্থান দেওয়া হয় ওই মন্ত্রিসভায়। ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এ এইচ মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নজরুল ইসলামকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর গত দেড় বছরে আর কোনো রদবদল আনেননি প্রধানমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।