বড়দের বিরোধে একসঙ্গে ৪ শিশু খুন, এ বছর ২৯ শিশু হত্যা

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.02.17
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
BD-child বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি চার শিশু নিখোঁজ হয়। এর পাঁচ দিন পর গতকাল বুধবার একসঙ্গে তাদের লাশ মিলল।
বেনার নিউজ

বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি চার শিশু নিখোঁজ হয়। এর পাঁচ দিন পর গতকাল বুধবার একসঙ্গে তাদের লাশ মিলল। পৈশাচিক ও লোমহর্ষক এই ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবলে।

চার শিশু খুনের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন সুন্দ্রাটেকি গ্রামের আব্দুল আলী ও তার ছেলে জুয়েল। বুধবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান বাহুবল মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন।

নিহতরা হচ্ছে; সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির (৭)। দ্বিতীয় শ্রেণির শুভ (৮)। চতুর্থ শ্রেণির তাজেল (১০)। সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাইল (১০)। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, বড়দের বিরোধের শিকার তারা।

শুভ সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে, তাজেল আবদুল আজিজের ছেলে, মনির আবদাল মিয়ার এবং ইসমাইল আবদুল কাদিরের ছেলে।

শিশু হত্যা ও নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে করা ফোরামের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতেই ২৯ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।

আর গত চার বছরে দেশে ১ হাজার ৮৫টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।

পারিবারিক কলহ, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, ব্যক্তিগত লোভ অথবা স্বার্থ আদায়ের অস্ত্র হিসেবেই শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এ মাসের শুরুতে কেরানীগঞ্জের স্কুলছাত্র আবদুল্লাহকে হত্যা করে অপহরণকারীরা।

চলতি মাসেই রাজশাহীর পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে জাহিদ হাসান (১৫) ও ইমন আলী (১৩) নামের দুই কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করে সেই ঘটনার ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক গণমাধ্যমে।

সম্প্রতি নাটোরের বাঘাতিপাড়ার মাকুপাড়া গ্রামে দোকানে চুরির অভিযোগে তিন শিশুকে পেছনে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে বাঁশের লাঠি দিয়ে বেদম ভাবে পেটানো হয়।

তবে গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন ও খুলনার মোহাম্মদ রাকিব হত্যা। মানুষ এ ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামলে নিম্ন আদালতে দ্রুত এ মামলা দুটির নিষ্পত্তি হয়।

রাজন হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি কামরুলসহ চারজনকে ফাঁসি ও সাতজনকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং রাকিব হত্যা মামলায় দুজনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।


পুরস্কার ঘোষণা

এদিকে বাহুবলে চার শিশুর হত্যাকারীদের সম্পর্কে তথ্যদানকারীকে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট অঞ্চলের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মিজানুর রহমান । তাদের লাশ উদ্ধারের পরপরই ডিআইজি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেন।

“যে তথ্য দেবে, তাঁর নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর পাশে থাকবে,” জানান ডিআইজি।

ডিআইজি আরও বলেন, বড়দের মধ্যে গ্রাম্য বিরোধ নিয়ে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই চার শিশুর সন্ধান না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। পরে গতকাল মঙ্গলবার চার শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে নিহত মনিরের বাবা আবদাল মিয়া বাদী হয়ে থানায় অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন।
“শিশুদের এইভাবে মেরে ফেলার ঘটনাগুলো মর্মান্তিক। আর এ ধরনের ঘটনা আমাদের প্রতিনিয়ত সহ্য করতে হচ্ছে,” বেনারকে জানান ঢাকার একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেতারা পারভীন।  

তিনি বলেন, শিশুদের শুধু ভালোবাসা পাওয়ার কথা। অথচ তারাই এ ধরনের নৃশংস ঘটনার শিকার হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।