শিশুর অপুষ্টি দূর করবে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর তৈরি বিশেষ খাদ্য

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.06.10
BD-child উদ্ভাবিত পথ্যটি ব্যবহার করে মাত্র ২০ দিনে শিশুটির ওজন বাড়ে ২ কেজি। ড. তাহমিদ গবেষণাপত্রটি উপস্থাপেনর সময় সালমার হাসপাতালে ভর্তি ও ছাড়ার দুটি ছবি উপস্থাপন করেন। জুন,২০১৫
বেনার নিউজ

মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসায় দেশীয় উপাদানে পথ্য তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এই পথ্য তৈরি করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, সম্পূর্ণ দেশীয় উপাদান চাল, ডাল, ছোলা, গুড়া দুধ, চিনি, সয়াবিন তেল ও মাইক্রো নিওট্রেন্টের মিশ্রণে তৈরি পথ্য শতকরা ৮০ ভাগ শিশুর অপুষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি ওজনও বাড়বে।

তবে অনেক পুষ্টিবিদদের অভিযোগ দীর্ঘমেয়াদে পথ্যটির ব্যবহার শিশুপুষ্টির পরিস্থিতি খারাপ করবে। এছাড়া পণ্যটি ভূল ব্যবহারেরও আশঙ্কা তাদের।

গত সোমবার আইসিডিডিআরবিতে পুষ্টিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পথ্য সম্পর্কে জানানো হয়। তিন বছর ধরে এ শিশুখাদ্য তৈরির গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী ও আইসিডিডিআরবির পুষ্টি কেন্দ্রের প্রধান তাহমিদ আহমেদ।  

তিনি জানান, স্বর্ণালি-১ ও স্বর্ণালি-২ নামে এ খাদ্য কোনো ধরনের জলীয় পদার্থ ছাড়া প্যাকেটজাত করা হয় বলে এগুলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে না। এক বছর পর্যন্ত খাবারটি ঘরের তাপমাত্রায় ভালো থাকবে। ১০০ গ্রামের একটি প্যাকেটের খাবার খেলে একজন শিশু ৫৪৩ কিলোক্যালোরি শক্তি পাবে। সাত থেকে আট দিন খাওয়ানোর পর থেকেই এর ফল পাওয়া শুরু হবে। তবে এটি শিশুর বয়স, ওজন ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।

গবেষণার সম্পর্কে ড. তাহমিদ বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক মান বজায় আইসিডিডিআরবি’র মহাখালী কলেরা হাসপাতাল, কুড়িগ্রামে টেরে দেস হোমস ক্লিনিক ও ঢাকার একটি ক্লিনিকে অপুষ্টির শিকার ৩২৭ জন শিশুর ওপর এ খাবার নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। এদের শতকরা ৮০ ভাগ শিশুর অপুষ্টি দূর হয়েছে। প্রতিটি শিশুরই বেড়েছে ওজন বেড়েছে। গবেষণা চলাকালে একটি শিশুরও মৃত্যু হয়নি।

খাবারটি ব্যবহারের আগে মাঠপর্যায়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

চাল, ডাল ও ছোলা দিয়ে তৈরি হওয়ায় ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়াসহ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্যও এটি উপযোগী হবে, বলে মনে করেন ড. তাহমিদ।

গবেষকদের ভাষায় এ পথ্যকে বলা হয় ‘রেডি-টু-ইউজ থেরাপিউটিক ফুড’ বা ‘আরইউটিএফ’। একটি ফরাসি প্রতিষ্ঠানের তৈরি এই পথ্য ‘প্লাম্পি নাট’ নামে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও পুষ্টিবিদদের প্রতিরোধের মুখে প্লাম্পি নাট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। উচ্চ ক্যালরির খাবার প্লাম্পিনাটের মূল্য বেশি হওয়ায় আমদানিতে প্রচুর টাকা খরচ হতো। তাই এক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও এর আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ছয় লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। এদের মৃত্যুর হারও ১০ গুণ বেশি। বয়সে বেড়ে উঠলেও মস্তিষ্ক ও ওজনের দিক দিয়ে এরা খুবই দুর্বল হয়।
তবে একাধিক পুষ্টিবিদ এই উদ্ভাবন বা এ ধরনের পথ্য বা খাবারের বিরোধিতা করে বলছেন, গুঁড়ো দুধ শিশুপুষ্টির জন্য যেমন হুমকি হয়ে আছে, আরইউটিএফও একই হুমকি তৈরি করবে।

অধ্যাপক এম কিউ-কে তালুকদার বলেন, এ পথ্যটি পরিচিতি এই পথ্য বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বিক্রি হবে। যেটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আর আইসিডিডিআরবির-ই একজন সাবেক পুষ্টিবিজ্ঞানী এস কে রায় বলছেন, অপুষ্টি দূর করতে সবসময় পারিবারিক খাবারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে ভাল ফলাফল এসেছে বলেও গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে। আরইউটিএফ ব্যবহারে পারিবারিক খাবার ব্যবহার কম গুরুত্ব পাবে।

তবে এ পণ্যটির এ বিষয়ে ড. তাহমিদ বেনারকে জানান, এটা কোনোভাবেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। কারণ, সাধারণত গ্রাম ও তৃণমূল পর্যায়ের শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার বেশি হয়। বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতাল ও বেসরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে এ খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা উচিত।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।