চার দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বাড়াবে সহযোগিতা

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.09.02
BD-connectivity চার দেশের যোগাযোগ মন্ত্রীরা গত ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে পণ্যবাহী গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত মোটরযান চলাচল সংক্রান্ত চুক্তিটি সই করেন।
বেনার নিউজ


দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের (বিবিআইএন) মধ্যে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

গত ২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে চুক্তির খসড়ায় অনুসমর্থন দেওয়া হয়। এর নাম ‘মোটর ভেহিক্যালস এগ্রিমেন্ট ফর দ্য রেগুলেশন অব প্যাসেঞ্জার, পারসোনাল অ্যান্ড কার্গো ভেহিকুলার ট্রাফিক বিটুইন বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল’।

এর আগে গত ১৫ জুন চার দেশের মন্ত্রীরা ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চুক্তিটি সই করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, “অন্য তিনটি দেশও খুব শিগগির নিজ নিজ মন্ত্রিসভায় এই অনুসমর্থন সম্পন্ন করবে। চার দেশের যোগাযোগ মন্ত্রীরা চুক্তিটি কার্যকর করতে হলে একটি প্রটোকল সই করতে হবে। আগামী ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চার দেশের নোডাল অফিসারদের (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার) একটি মিটিং হবে। সেখানে প্রটোকলের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। আগামী অক্টোবরে চার দেশের মধ্যে কার-র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে, যা শুরু হবে ভারত থেকে”।

অভিন্ন ঐতিহ্যের অংশীদার এই চার প্রতিবেশীর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর এ উদ্যোগ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতার দ্বার উন্মোচনে সহায়তা করবে বলে সংশ্লিষ্ট দেশের বিশেষজ্ঞদের ধারণা।


অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ

ঢাকা ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সিপিডি এক হিসেবে উল্লেখ করেছে, পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সড়ক, রেল, অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও বন্দর-এসব অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রায় ৮০০ কোটি ডলার প্রয়োজন। মাশুল, যৌথ বিনিয়োগ, সহজ শর্তে ঋণ থেকে এসব অর্থ আসতে পারে।

“চুক্তিটি বাস্তবায়ন হলে ট্রানজিট নেওয়া সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর যে পরিমাণ আর্থিক সাশ্রয় হবে, তা থেকে ট্রানজিটদাতা দেশ কতটা সুবিধা পাবে, তা নির্ধারণ করাটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ,” বেনারকে জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

সরকারিভাবেও এই খাতের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

চুক্তিভুক্ত কোনো দেশ চাইলে ছয় মাসের নোটিশ দিয়ে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। এ চুক্তিতে ভবিষ্যতে অন্য দেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগও থাকবে। তবে সে ক্ষেত্রে চার দেশের সম্মতির প্রয়োজন হবে।

“ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আদলে এই যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। যান চলাচল চুক্তির আওতায় ভবিষ্যতে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সংযুক্ত হতে পারবে,” বেনারকে জানান সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের ।

তাঁর মতে, আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেনে উন্নীত করার মতো প্রকল্পগুলো কাজে লাগবে।

বর্তমানে সড়ক পথে নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। তবে সীমান্তে গিয়ে গাড়ি বদলে ভারত হয়ে নেপাল বা ভুটানে যাওয়া যায়।


কয়েকটি পথের প্রস্তাব করেছে সিপিডি

সিপিডি বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে যান চলাচল চুক্তিগুলো (মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট) বাস্তবায়নের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।

প্রতি কিলোমিটার সড়ক আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা খরচ হবে।

সড়ক যান চলাচলের জন্য সিপিডি বেশ কয়েকটি পথের প্রস্তাব করেছে। এগুলো হলো-কলকাতা-পেট্রাপোল/বেনাপোল, ঢাকা-আখাউড়া-আগরতলা, আগরতলা-আখাউড়া-চট্টগ্রাম, শিলচর-সুতারকান্দি-চট্টগ্রাম, কাঠমান্ডু-কাকরভিটা/ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা-হাটিকুমরুল-মংলা, কাঠমান্ডু- কাকরভিটা/ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা-হাটিকুমরুল-চট্টগ্রাম, স্যামড্রুপ জংখার (ভুটান)-গোয়াহাটি, শিলং-তামাবিল-সিলেট-চট্টগ্রাম, থিম্পু (ভুটান)-ফুয়েন্টসিলিং-জয়গাও/বুড়িমারী-হাটিকুমরুল-মংলা এবং থিম্পু (ভুটান)-ফুয়েন্টসিলিং-জয়গাও/বুড়িমারী-হাটিকুমরুল-চট্টগ্রাম।


পথ কমবে, পরিবহন খাতে বিনিয়োগ বাড়বে

সিপিডি আরো জানায়, যান চলাচলে সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যবসায়ীদের পরিবহন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। এ ছাড়া পথও কমবে।

এখন কলকাতা থেকে আগরতলায় যেতে ১ হাজার ৬৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে গেলে এর দূরত্ব হবে ৪০০ কিলোমিটার। এতে ৭৬ শতাংশ দূরত্ব কমবে।

সিপিডি হিসাব দিয়েছে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট হলে রেলপথে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে খরচ ৩০ ডলার থেকে কমে তা ১১ ডলারে নেমে আসবে। অন্যদিকে সড়কপথে এ খরচ প্রতি টনে ১৫০ ডলার থেকে ৫০ ডলারে নেমে আসবে।

“চার দেশের এই সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপন হলে সবপক্ষই লাভবান হবে। বাংলাদেশ সরকার এর বাস্তবায়নে খুবই আন্তরিক,” বেনারকে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ।


যাত্রী তোলা, তল্লাশি ও পরিদর্শন

চুক্তি অনুযায়ী এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার সময় মাঝপথে কোনো যাত্রী বা মালামাল তোলা যাবে না। যে দেশের ওপর দিয়ে যানবাহন যাবে সেই দেশের কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে যেকোনো যান তল্লাশি ও পরিদর্শন করতে পারবে।

এ ছাড়া কোনো দেশে যদি কোনো পণ্য নিষিদ্ধ থাকে তাহলে সেই দেশের ওপর দিয়ে সেই পণ্য পরিবহন করা যাবে না। চুক্তি অনুযায়ী চার দেশের মধ্যে সড়ক পথে চলাচলের রুট পারমিট নিতে হবে।

যান চলাচল ব্যবস্থা চালুর আলোচনায় তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এগুলো হলো-যান চলাচল ব্যবস্থা, মাশুল ও বিনিয়োগ।

“এ জন্য দর-কষাকষিতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে প্রস্তুতি নিতে হবে, প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে,” বেনারকে জানান দেবপ্রিয়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।