বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন নারী ক্রিকেটারদের
2015.12.03
ক্রিকেট পাগল জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরা ইতিমধ্যেই বিশ্বখ্যাত। বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মাত্র কয়েক মাসের পারফরম্যান্সে বিশ্ব একাদশে স্থান করে নেওয়া বোলার মুস্তাফিজুর রহমানদের মত ক্রিকেটাররাই দেশবাসীকে নতুন নতুন খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। এবার সে বহরে যুক্ত হয়েছে দেশের নারী ক্রিকেটাররাও।
অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ভারতে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তারা আবারও বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের শক্তি প্রমাণিত করেছে ব্যাংককের মাটিতে। মুস্তাফিজদের সঙ্গে এখন জয়জয়কার শোনা যাচ্ছে ফারজানা হক, রুমানা আক্তারদেরও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরুষ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি নারী ক্রিকেটারদের ব্যাপারেও মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।
বৃহস্পতিবার মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ফাইনালে পৌঁছুতে জিম্বাবুয়েকে ৩১ রান হারায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে বিশ্বকাপের লক্ষ্যপূরণ হয়ে গেলেও জাহানারা আলমের দলের লক্ষ্যের ব্যপ্তিটা এখন আরও বড়। বাছাইপর্বে এক নম্বর জায়গাটি অর্জনে বাংলাদেশের পরবর্তী পরীক্ষা ফাইনালের লড়াই। এছাড়া বিশ্বকাপে ভাল কিছু করার টার্গেট তো রয়েছেই।
আগামী শনিবার বাছাইপর্বের ফাইনালে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ফাইনালের এই দুই দলই বিশ্বকাপে খেলবে।
ব্যাটিংয়ে দুর্বল বাংলাদেশ
ব্যাংককের টের্দথাই ক্রিকেট মাঠে টস হারলে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ব্যাট হাতে বাংলাদেশি মেয়েদের বাজে পারফরম্যান্সে শুরু থেকেই বিশ্বকাপের লক্ষ্য দূরে যেতে থাকে। রানের দুই অঙ্কের দেখা পাননি শারমিন আকতার ছাড়া আর কেউই। দলের অন্যতম ভরসা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আয়েশা রহমান ফেরেন মাত্র ৫ রানে; রুমানা আহমেদ আর শায়লা শারমিন-দুজনেই আউট হন ‘শূন্য’ রানে।
এভাবে দলের সংগ্রহ ১০০ ছাড়িয়ে যায়নি। বাংলাদেশকে মাত্র ৮৯ রানে আটকে দেয় জিম্বাবুয়ে। তবে রানের অতৃপ্তির কেটে যায় বাংলাদেশের মেয়েদের বোলিংয়ে।
রুমানা আহমেদ বল হাতে দারুণভাবে নিজের ধারাবাহিকতার পরিচয় দেন। মাত্র ৮ রান খরচ করে আয় করেন ৪ উইকেট। সেখানেই জিম্বাবুয়ের ইনিংসের মেরুদণ্ডটা ভেঙে যায়। রুমানার পাশাপাশি নৈপূন্য দেখান ফাহিমা খাতুন ও শায়লা শারমিনরাও। পাঁচ বল বাকি থাকতে ৫৮ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
এর আগে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছিল সেই আসরের স্বাগতিক বাংলাদেশ। আয়োজক বলে বাংলাদেশকে বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসতে হয়নি।
এরআগে গত মঙ্গলবার পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের সেমিফাইনালে পৌঁছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট টিম৷ সেখানেও শক্তিশালী বোলিংয়ের পরিচয় রাখে তারা।
তবু অবহেলিত নারী ক্রিকেটাররা
এদিকে একইভাবে দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনলেও সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের পার্থক্য আকাশ-পাতাল।
এবিষয়ে ক্রীড়া সাংবাদিক সুব্রত ববি বেনারকে বলেন, “নারী ক্রিকেটাররা এগিয়ে যাচ্ছে সত্য। কিন্তু মাশরাফিদের তুলনায় জাহানারারা নানাভাবে বঞ্চিত-এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পুরুষ দলের ‘এ’ ক্যাটাগরির একজন ক্রিকেটার যেখানে কয়েক লক্ষাধিক টাকা বেতন পান, সেখানে একই ক্যাটাগরির একজন নারী ক্রিকেটার পান মাত্র ১০ হাজার টাকা। অন্যন্য সকল ক্ষেত্রেও পার্থক্যটা এমন। এথেকেই আন্দাজ করা যায়- মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নারী ক্রিকেটাররা কতটা পিছিয়ে।”
‘যথাযথ সম্মান ও সুযোগ দিতে হবে’
নারী ক্রিকেটাররা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের যথাযথ সম্মান ও সুযোগ দেওয়ার দাবি এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে দেশের সব ধরনের ক্রিকেটের একজন নিয়মিত দর্শক আতিকুর রহমান বেনারকে বলেন, ‘একটা সময় ছিল ক্রিকেট মানেই পুরুষদের খেলা ভাবা হত। এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে এদেশের নারী ক্রিকেটাররাও। এটা নিঃসন্দেহে ভাল খবর। তারা দেশের জন্য যে সাফল্য বয়ে আনছে; তার যথাযথ সম্মান তাদেরকে দিতে হবে। তবে তাদের উৎসাহ ও সাফল্য ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় নার্সিং অত্যন্ত জরুরি”।