সরকারি খরচে বিলুপ্ত ছিটমহলের নারীদের বিদেশে চাকরি
2016.02.10
অধুনাবিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা এখন নতুন বাংলাদেশি। স্বাভাবিকভাবেই নতুন এই অধিবাসীরা পুরো বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিবেচনায় অনেক অনেকগুন পিছিয়ে। সবচেয়ে পিছিয়ে এখানকার নারীরা। তাই ছিটমহলের উন্নয়নের উদ্যোগের পাশাপাশি এখানকার নারীদের উন্নয়নের কথাও ভাবছে সরকার।
অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করতে বিলুপ্ত ছিটমহলের একশজন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনা খরচে বিদেশে পাঠানো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
পরবর্তিতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সরকারের এ উদ্যোগ স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ ৬৫ বছর ছিটমহল ইস্যু অমিমাংসাতি থাকায় এখানকার জনগোষ্ঠী মারাত্মকভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। তাই তাদেরকে উন্নয়নের কাতারে নিয়ে আসতে সরকারের এ উদ্যোগ প্রসংশনীয়।
প্রশিক্ষণ চলছে ৪০ জন নারীর
জানা যায়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিদেশে নতুন বাংলাদেশি নারী কর্মী পাঠানোর প্রথম ধাপে বিলুপ্ত ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া গ্রামের ৪০ জন নারীকে কুড়িগ্রাম টিটিসি (টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার) পোশাক কর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। গত মাসে ওই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।
এ বিষয়ে তিনি বেনারকে বলেন, ছিটমহলের বাসিন্দারা গত ৬৮ বছর ধরে তাদের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হয়েছে। এখন তারা এদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে। তার ভাগ্যবঞ্চিত এসব মানুষদের ভাগ্যন্নোয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তার সেই অঙ্গিকার বাস্তবায়নে এবং প্রথম দফায় ছিটমহলবাসীর নবযুগের সূচনায় কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া থেকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে ৪০জন নারীকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গন্তব্য জর্ডান বা হংকং
জানা যায়, প্রধানত জর্ডানে পাঠানোর উদ্দেশ্যে এসব নারীকে গার্মেন্ট কর্মী হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে হংকং বা অন্য কোন দেশে চাহিদা থাকলে সেখানেও পাঠানো হতে পারে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার চৌধুরী বেনারকে বলেন, জর্ডানে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের নারী গার্মেন্টস কর্মীরা যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশটি দু’হাজার দক্ষ নারী শ্রমিক চেয়েছে। সেখানকার চাহিদা মেটাতে ছিটমহল থেকে একশ নারীকে বাছাই করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম টিটিসি’তে আসন সংকুলানের অভাবে প্রথমে ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে আরো ৬০জনকে দেওয়া হবে।
কবে নাগাদ এসব নারীদের বিদেশ পাঠানো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরেই তাদের যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব তাদেরকে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে সরকার।
তিনি বলেন, তাদেরকে জর্ডানে পাঠানোর কথা বলা হলেও যদি হংকং বা অন্যকোন দেশ থেকে আরো ভাল সুযোগ আসে তাহলে সেখানেও পাঠানো হতে যারে। তবে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলাটাই বড় কথা।
এসব নারীদের দু’ম্যাসবাপী আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি দিনে দেড়শ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আনন্দিত নতুন নাগরিকরা
সরকারের এ উদ্যোগে অত্যন্ত আনন্দিত বাংলাদেশের নতুন নাগরিকরা। প্রশিক্ষনার্থী শরিফা খাতুন বলেন, নতুন নাগরিক হওয়াটা জীবনের সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিলো। কিন্তু কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাব সেটা ভাবতেও পারিনি। এখন কাজ শিখছি। যদি বিদেশ যেতে পারি তাহলে আমার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে এই স্বপ্ন দেখি।
প্রশিক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম কিছুটা কঠিন লাগলেও ধীরে ধীরে সেলাই কাজ রপ্ত করছেন তিনি। তবে শুধু সেলাই নয়, বিদেশে চলাফেরা থেকে শুরু করে নানা নিয়মকানুনও এখানে শেখানো হয়। এখানে সুযোগ পেয়ে আমি ও আমার পরিবার অত্যন্ত খুশি।
যুগান্তকারী উদ্যোগ
সরকারের এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী বলে অভিহিত করেছেন জনশক্তি সংশ্লিষ্টরা।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সিনিয়র সহসভাপতি আলী হায়দার চৌধুরি বেনারকে বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং যুগান্তকারী। এর মাধ্যমে সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলের পিছিয়ে পড়া নারীদের শুধু নয় পিছিয়ে পড়া ওই এলাকার সকল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তি খাতে সংযুক্ত করা হল। আশা করি জনশক্তি রপ্তানিকারকরাও এই এলাকা থেকে নারী পুরুষ সকলকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেবে।