ফাঁসি হলেও ফেসবুক খুলছে না, অস্বস্তিতে ব্যবহারকারীরা
2015.11.23
দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি তো হলো, কখন খুলবে ফেসবুক? এই জিজ্ঞাসা এখন দেশের লাখ লাখ মানুষের। সরকার বলছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেলে ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকেরা সেই দিনক্ষণ বলতে পারছেন না।
সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকায় এগুলোর ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা ও অস্বস্তি বিরাজ করছে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ক্ষোভটা বেশি।
কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, চায়ের দোকান, অফিস–আদালত ও আড্ডাসহ সবখানেই ফেসবুক ঘিরেই এখন জল্পনা-কল্পনা। কেউবা বিকল্প ব্যবস্থায় ফেসবুক চালু করেছে, কেউবা সেই উপায় খুঁজছে।
“সবকিছুর চেয়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়ই বড়। কিন্তু সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফেসবুক কবে খুলে দেওয়া হবে, তা ঘোষণা করা উচিত,” বেনারকে বলেন ঢাকার বদরুন্নেসা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ইসরাত জাহান বীথি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বন্ধ করাটা কোনো সমাধান নয়। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা প্রযুক্তি দিয়েই করতে হবে।
“এটা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো অবস্থা,” বেনারকে জানান তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার।
তাঁর মতে, “প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। কোনো অ্যাপস বন্ধ করা নয়; বরং সক্ষমতা বৃদ্ধিই সমাধান।”
মুঠোফোনে কথোপকথন, বার্তা ও ভিডিও বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয় অ্যাপসের মধ্যে রয়েছে ভাইবার, ট্যাংগো, হোয়াটসঅ্যাপ, মাই পিপল ও লাইন।
সরকারের হিসাবে, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দেশে এখন ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।
গত বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত রায়েও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দিনই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় জনস্বার্থে এসব অ্যাপস বন্ধ করে সরকার।
তার আগে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারকে এসব অ্যাপস বন্ধ রাখতে অনুরোধ করে।আর তা করতে গিয়ে ওই দিন প্রায় দেড়ঘন্টা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
“ফেসবুক বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ ফেসবুকের বিকল্প আমাদের হাতে নেই,” বেনারকে জানান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাজীব আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য এটি বন্ধ করেছে, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু অর্থনীতির কথা চিন্তা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা খুলে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
“জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যত দিন প্রয়োজন তত দিন ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকবে,” সাংবাদিকদের বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
আর টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই এগুলো খুলে দেওয়া হবে।
“ফেসবুকসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ হওয়ার পর প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যান্ডউইথের ব্যবহার কমে গেছে,” সাংবাদিকদের জানান ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি এম এ হাকিম।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন তাদের সাড়ে ৪শ’ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো। এখন ফেসবুক বন্ধের পর ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৩শ’ টেরাবাইটের নিচে নেমে এসেছে।
এসেছে বিকল্প প্রযুক্তি
ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যমই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিলেও বিকল্প পথে (প্রক্সি সার্ভার দিয়ে) এসব মাধ্যম ব্যবহার করছেন অনেকে। আবার কোনো কোনো এলাকায় স্বাভাবিকভাবে ফেসবুক ব্রাউজ করার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভাইবার কল করাও সম্ভব হয়েছে। আবার অনেক এলাকায় একেবারেই বন্ধ রয়েছে সবকিছু।
“এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ নেটওয়ার্ক বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে, সাংবাদিকদের জানান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহ্জাহান মাহমুদ।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা পেলে এগুলো খুলে দেওয়া হবে। তবে সে পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
বিটিআরসি বলছে, কেউ বিকল্প পথে বন্ধ অ্যাপস ব্যবহার করছে—এটা জানামাত্র সেটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি
দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরকে সামনে রেখে সারাদেশে সরকার ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখার পাশাপাশি ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করে।
র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সহ আইন শৃংখলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয় যে কোনো নাশকতামূলক আক্রমন প্রতিহত করার জন্য।
ব্যাপক কড়াকড়ির মধ্যে সোমবার জামায়াতের ডাকা হরতালে কোনো সাড়া ছিল না। দলীয় কর্মিদের কোথাও মিছিল বা পিকেটিং করতে দেখা যায় নি।
আইএস-এর দাবি, বাংলাদেশে দ্রুত হামলা শুরু করবে
এদিকে, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস নতুন করে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ‘বাংলাদেশে আইএস মনোনীত একজন আঞ্চলিক নেতার নেতৃত্বে জিহাদিরা সংগঠিত হচ্ছে এবং দ্রুতই হামলা শুরু করবে।’
বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই বলে আওয়ামী লীগ সরকারের দাবির সমালোচনা করেছে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি।
আইএস বলছে, বারবার ‘বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই’ বলে স্লোগান দেয়ার কোনো যুক্তি নেই।
সোমবার ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের আতঙ্কের প্রতিমূর্তি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস তাদের অনলাইন ম্যাগাজিন ‘দাবিক’ এ দাবি করেছে ঢাকায় বিদেশি নাগরিকদের হত্যার মাধ্যমে তারা তিউনিসিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিশাল ভূখন্ডে কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হয়েছে।
আল-কায়েদার নেতৃত্বের সমালোচনা করে নিজেদেরকেই আন্তর্জাতিক জিহাদের নেতা দাবি করে বলা হয়েছে, ‘ভূখন্ডের পরিধি এতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে যেন আইএস অধিকৃত ভূখন্ডে সূর্য অস্ত না যায়।’
‘দাবিক’ ম্যাগাজিনে বলা হয়েছে, ‘আইএস থাকবে। সিরিয়া থেকে ইরাক, মধ্য এশিয়া থেকে ককেসাস, তিউনিশিয়া থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত আইএসের বিস্তার ঘটেছে। যদিও বাংলাদেশে বর্তমানে মুশরিক সরকার ক্ষমতায়। খিলাফত ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, যেন আইএস ভূখন্ডে সূর্য অস্ত না যায়।’