ট্যাম্পাকোর মালিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ; এ পর্যন্ত ৩৯টি লাশ উদ্ধার
2016.09.26
গাজীপুরের টঙ্গীতে পুড়ে যাওয়া ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার মালিকের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্ট। দুর্ঘটনার ১৬ দিন পরে টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর ওই কারখানাটির ধ্বংসস্তুপ থেকে আরো তিনজন শ্রমিকের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে।
বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড ও ধসের ওই ভয়াবহ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিলেও তাতে শ্রমিকদের জন্য ছাড় দিয়েছেন আদালত। আদেশে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের বেতন, ভাতা ও ক্ষতিপূরণ পরিশোধের জন্য ওই অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ তুলতে বাধা নেই।
এ পর্যন্ত এসব খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা একমাসের মধ্যে প্রতিবেদন আকারে জানাতে কারখানার মালিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। শ্রম ও কর্ম সংস্থান সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, কারখানা মালিক মকবুল হোসেনসহ ১৯ জনকে রুলের জবাব দিতে হবে।
অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে কয়েকটি মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন গত ১৯ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে রিট আবেদনটি করেছিল।
রিট আবেদন করা সংস্থা মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্ল্যাস্ট) ও আইনও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির পক্ষে উচ্চ আদালতে শুনানিতে অংশ নেন শরীফ ভূঁইয়া ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন।
কারখানার মালিক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মো. মকবুল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার।
শরিফ ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “তিন মাসের জন্য ট্যাম্পাকো মালিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।”
গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে প্যাকেজিং ও প্লাস্টিকের প্যাকেট এবং ফয়েল তৈরির ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে একটি অংশ ধসে পড়ে।
ধ্বংসস্তুপে আরো তিন লাশ
অগ্নিকাণ্ডের ১৬ দিন পর সোমবার উদ্ধার কাজ চলাকালে ট্যাম্পাকোর ধ্বংস্তূপে আরও তিনটি কঙ্কাল পেয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা। দেহাবশেষগুলোর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে বেনারকে জানিয়েছেন গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “পুড়ে যাওয়া ওই কারখানার ধ্বংসস্তুপ সরাতে এখনো কাজ করে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর যৌথ দল।”
উদ্ধারকৃত নতুন তিন লাশের একটির সাথে থাকা কাগজপত্র দেখে তাকে কারখানার নিখোঁজ অপারেটর চুন্নু মোল্লা বলে ধারণা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে দু’টির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এসব লাশ পুড়ে নাকি পচে কঙ্কাল হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে না বলে জানান উদ্ধারকর্মীরা। গত শনিবারও ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করেন তারা।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর মধ্যে নয়টি শনাক্ত হয়নি।
এ বিষয়ে ট্যাম্পাকো দুর্ঘটনা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টঙ্গী থানার এসআই সুমন ভক্ত বেনারকে জানিয়েছেন, “পরিচয়হীন লাশগুলোর ডিএনএ সংগ্রহের পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনাও নেওয়া হচ্ছে। এসব নমুনা মিলিয়ে লাশ শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।”
কারখানার মালিক পলাতক
ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানা বিস্ফোরনের পর নিহতদের পরিবারকে মালিকপক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং লাশ বহনের জন্য জেলা প্রশাসন ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রায় সবাই এই টাকা পেলেও তা যথেষ্ট নয় বলে শ্রমিকেরা মত দিচ্ছেন।
ওই কারখানা বিস্ফোরনে হতাহতের ঘটনায় কারখানার মালিক মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত তাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
তবে মালিক মকবুল হোসেন পালিয়ে বেড়াবেন না বলে বেনারকে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আর এম আতাউল গণি।
আইনজীবী বলেন, “তিনি (মকবুল হোসেন) পলাতক নন, দেশে আছেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রয়োজন হলে আত্মসমর্পন করবেন অথবা আগাম জামিন নিবেন।”
নিহত ২৫ শ্রমিকের পরিবারকে মালিকের পক্ষ থেকে এক লক্ষ করে মোট ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।