ফেসবুকের সঙ্গে সরকারের আলোচনা, চলছে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ
2015.12.07
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে—সরকারের মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীরা এমন অঙ্গীকার করলেও কবে তা ঘটবে সেই তারিখ কেউ বলছেন না। এরই মধ্যে গত রোববার ফেসবুকের কর্মকর্তারা সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে গেলেন।
তবে বৈঠকের আলোচনা বা সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনো ধরনের বক্তব্য দেননি ফেসবুক কর্মকর্তারা। আর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, সরকারের সঙ্গে এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শিগগির ফেসবুক খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে।
গত ১৮ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ সহ ইন্টারনেটে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম সরকারের নির্দেশে বন্ধ আছে। সরকার তখন বলেছিল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এরপর ফেসবুকের সঙ্গে চুক্তি করার লক্ষ্যে বিশদ আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে গত ৩০ নভেম্বর সংস্থার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কার্যালয়ে চিঠি পাঠান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এরই জের ধরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ফেসবুকের পক্ষে ছিলেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ম্যানেজার দিপালী লিবারহেন এবং আইন-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ বিক্রম লাংঘে।
সরকারের পক্ষে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ এবং সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
“বৈঠকে বাংলাদেশে ফেসবুকের ব্যবহার নিয়ে সরকার তার কিছু উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কেন, কী পরিস্থিতিতে ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছে তা তুলে ধরা হয়,” বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেসব সমস্যায় পড়েন তা বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। ফেসবুক প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে শুনেছেন ও নোট নিয়েছেন।
ফেসবুকের কাছে সরকারের চাওয়া কী ছিল জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকে অ্যাবিউজ করছে, অনেকে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার কিছু প্রশ্ন আছে-সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে।"
শিক্ষার্থীদের নির্বাক অবস্থান
ফেসবুক বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘তুলতে হবে নিষেধাজ্ঞা, খুলতে হবে ফেসবুক’ ব্যানার নিয়ে নির্বাক কর্মসূচি পালন করে।
গত কিছুদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। কেউবা ক্ষোভ মেটাতে বুকে প্লাকার্ড ধরে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে।
“ফেসবুক বাংলাদেশে বিকল্প গণমাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। স্বাধীন মত প্রকাশের স্বার্থে অবিলম্বে এটি খুলে দেওয়া উচিত,” বেনারকে জানান ‘নির্বাক অবস্থান কর্মসূচির’ আহ্বায়ক ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিধান মুখার্জি।
“নিরাপত্তার জন্য ফেসবুক ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা থাকতে পারে। কিন্তু এটা দীর্ঘদিন চলতে পারে না," বেনারকে জানান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি শামীম হোসেন।
এর আগে রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (বিএফইআই) ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে স্লোগান দেওয়া হয়, “ফেসবুক খুলে দিন, না হয় একটা চাকরি দিন।”
ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং সম্ভাবনাময় ই-কমার্সের স্বার্থে ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, ফেসবুক বন্ধ থাকায় তাদের অনলাইন ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে তাদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
‘ফেসবুক খুলে দিন। আমাদের কথা বলার সুযোগ দিন’—এই স্লোগান দিয়ে গত শনিবার শাহবাগে সমাবেশ করে লেখক-শিল্পী-অনলাইন ব্যবসায়ী-অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম।
ফেসবুক কবে নাগাদ খুলে দেওয়া হবে তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বেনারকে বলেন, “বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রশ্নে আমরা ফেসবুক বন্ধ রেখেছি। আমাদের আরও কিছু চিন্তা-ভাবনার বিষয় আছে, সেগুলো শেষ করে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”