খুলে গেল সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম‏

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.14
BD-fb ফেসবুক ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে অনেক সংগঠন রাস্তায় এসে প্রতিবাদ জানায়।
বেনার নিউজ

ফেসবুক খোলার ৪দিন পর এবার বন্ধ থাকা অন্যান্য সকল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম খুলে দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। এতে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, লাইন, ট্যাংগো, হ্যাংআউট, স্কাইপ, ইমো, টুইটারসহ অন্যান্য মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে, গ্রেফতার হওয়া ফেসবুক পেজ ‘মজা লস’র অ্যাডমিন রিফায়েত আহম্মেদকে জামিন দিয়েছে আদালত।

সোমবার বিকেলে বন্ধ থাকা সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম খুলে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেওয়া হয় বলে বেনারকে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

পরে বিটিআরসি দেশের সব মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নির্দেশনা দেয়। এদিন সন্ধ্যা থেকেই এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পারছে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।

এ বিষয়ে বিটিআরসি শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বন্ধ থাকা সব যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েকে (আইআইজি) এসব অ্যাপস খুলে দিয়েছে।

আর এখন থেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ বা খোলার ব্যাপারে বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে, দুটি আলাদা নির্দেশনায় গত ১৮ নভেম্বর থেকে ফেসবুক-ভাইবার-হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। নিরাপত্তাজনিত কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল বলে বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওই দিন দুপুরে প্রথম নির্দেশনায় ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার,  ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ এবং পরে আরেকটি নির্দেশনায় লাইন, ট্যাংগো, হ্যাংআউটসহ আরও কয়েকটি মাধ্যম বন্ধের কথা জানানো হয়।

এর ২২ দিন পর গত ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দেওয়া হয়। ওই দিন বলা হয়েছিল, ‘জননিরাপত্তার জন্য হুমকির মাত্রা কমে আসা’ এবং ফেসবুকের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনার ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগের  আলোচনার পর ফেসবুক খুলে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি তরুণ সমাজের ‘প্রয়োজন ও চাহিদার’ কথাও বিবেচনা করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কতার কারণেই ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ ইন্টারনেটে যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকছে।


একদিন বন্ধ থাকল টুইটার স্কাইপ, ইমো

শুরু থেকে ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যাঙ্গোসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকলেও চালু ছিল মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটার এবং ইন্টারনেটে সহজে কথা বলার মাধ্যম স্কাইপ ও ইমোর কার্যক্রম। কিন্তু হঠাৎ করেই রোববার এসব অ্যাপসগুলোও বন্ধ করা হয়। তবে একদিন পর সোমবার সন্ধ্যায় ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে সেগুলোও খুলে দেওয়া হয়।

মূলতঃ এসব অ্যাপসগুলো বিদেশে অবস্থানরত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত। এ কারণে ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলা এই যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।

আবদুল আলিম নামে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার ট্যাক্সিচালক বেনার কে বলেন, ‘আমার বড় ভাই এবং তিনজন মামা বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। সরাসরি বিদেশ ফোন করতে অনেক টাকা খরচ। তাই তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য আমি এবং আমার পুরো পরিবার ইমো’র ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু হঠাৎ করে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছিলাম। এসব অ্যাপসগুলো পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে অনেক ধন্যবাদ।’


‘অনেক কিছু ব্যবহারের যোগ্যতা নেই’

‘নিরাপত্তা সতর্কতা’র কারণেই ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ রাখা হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরু থেকেই নজরদারি না করার কারণেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে এসব অন্যায় কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।

এ বিষয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)শিক্ষক মোহাম্মদ কায়েকোবাদ বেনারকে বলেন, ‘আমরা অনেক কিছুই ব্যবহার করি, যা ব্যবহারের যোগ্যতা আমাদের নেই। আমাদের মানবিক গুনাবলির এতটা বিকাশ হয়নি, যে আমাদেরকে যেকোন সুযোগ দিলে তার সঠিক ব্যবহার করব। আর এ কারণেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছে এক ধরনের অপরাধী। সরকারের কাছে নিশ্চয় সে ধরনের তথ্য আছে। যার ভিত্তিতে এসব যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করা হয়’।

তবে তিনি বলেন, এই সচেতনতা শুরু থেকেই আসলে আরো উপকার হত। যেমন- আমরা সকলের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার আগে সেটা নিবন্ধনের কথা ভাবিনি। সেই মোবাইলের মাধ্যমে যখন হরহামেশা চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধ ঘটছে, তখনই মোবাইলের সিম নিবন্ধনের তাগাদা অনুভব করতে পেরেছি। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি শুরু থেকে নজরে আসা দরকার ছিল।


‘মজা লস’ পেজের অ্যাডমিনের জামিন

এদিকে গ্রেফতার হওয়া ফেসবুক পেজ ‘মজা লস-এর অ্যাডমিন রিফায়েত আহম্মেদকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

দুইদিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করার পর এক জামিন আবেদনের শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।

আইনজীবী শুনানিতে বলেন, এই মামলায় আসামির বিরুদ্ধে আনা  অভিযোগ সত্য নয়। পুলিশ আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও অভিযোগের বিষয়ে কোনো তথ্যাদি পাওয়া যায়নি তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে জামিন দেওয়া আবশ্যক।

গত বৃহস্পতিবার সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কটূক্তি এবং অপপ্রচারণার অভিযোগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে রিফায়েতকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।