চালের মজুদ পর্যাপ্ত, রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ
2015.03.31
বাংলাদেশ ও ভারত–দুই প্রতিবেশি দেশেই চালের মজুদ যথেষ্ট। আবার ফলনও ভালো হয়েছে। আয়তন ও জনসংখ্যা অনুপাতে ছোট দেশ বাংলাদেশ, এখন ভারত থেকে চাল আমদানি হচ্ছে বেসরকারীভাবে, এ নিয়ে ভাবনায় পড়েছে সরকার।
গত ৩০ মার্চ বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়। বেসরকারি পর্যায়ে এই আমদানি চলতে থাকলে বাজারে তার প্রভাব কতটা পড়বে, আবার আমদানি নিরুৎসাহিত করলে তারও প্রভাব কতটা পড়বে তা নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেন কয়েকজন মন্ত্রী।
“দেশে খাদ্যমজুদ যথেষ্ট রয়েছে।গুদামগুলো খাদ্যশস্যে পরিপূর্ণ, এমনকি মজুদ তিন লাখ টন বেশি আছে। এ ছাড়া বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এমতাবস্থায় চাল আমদানি প্রয়োজন নেই,” বেনারকে জানান খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
আগামী মে মাসের মাঝামাঝি থেকে বোরো সংগ্রহ শুরু করার কথা জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখন চাল রপ্তানি করতে পারি। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার খোঁজা শুরু হয়েছে”।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এ বছরের মার্চে ভারত থেকে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। গত বছর এই সময়ে চাল আমদানি করা হয়েছিল প্রায় চার লাখ টন। এবার একই সময়ে প্রায় সাড়ে আট লাখ টন চাল আমদানি করায় সরকার কিছুটা উদ্বিগ্ন।
“ভারত সরকার প্রতি তিন বছর পর তাদের খাদ্যগুদামগুলো খালি করে। এরই অংশ হিসেবে আট টাকা দামে গুদামের মোটা চাল বিক্রি করে তারা গুদাম খালি করছে। এই কম দাম বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মনযোগ আকর্ষণ করেছে,” জানান কামরুল ইসলাম।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাধিক মন্ত্রী চাল আমদানি বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, চাল আমদানি নিরুৎসাহিত বা বন্ধ করলে তার প্রভাবও ভেবে দেখা দরকার।
“দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলাপ–আলোচনা হলেও তার মানে এই নয় যে, দেশে কোনো ঘাটতি বা আতঙ্ক আছে। ভারত থেকে প্রচুর চাল এসেছে, এটা না আসলেও চলত,” জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৭ মার্চে চাল মজুদ ছিল ৯ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য মজুদের পরিমান প্রায় তিন লাখ টন। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচীর (টিআর, কাবিখা) মাধ্যমে এই উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য ছেড়ে দিয়ে গুদাম খালি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।কারণ বোরো সংগ্রহের জন্য গুদাম খালি করতে হবে।
বেসরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে চাল আমদানিকারক ঢাকার ব্যবসায়ী সেখ মজনু মনে করেন, বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে ভারসাম্যহীন অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা দূর করতে হবে। তাঁর মতে, কম দামে চাল আমদানি হওয়ায় নায্যদামে দেশী চাল বিক্রি করতে পারছে না কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
“আমাদের দেশে যে চালের উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা, তা খরচসহ ২২ টাকায় ভারত থেকে আনা যাচ্ছে। এমনকি মিনিকেট চাল উৎপাদনে আমাদের দেশে প্রতি কেজির খরচ ৪০ টাকা পড়লেও ভারত থেকে আনা যাচ্ছে ৩০ টাকার মধ্যে,” বেনারকে জানান সেখ মজনু।
“দেশে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি একর বা ৬ কোটি বিঘা। প্রতি বিঘায় গড়ে ৮ থেকে ৩০ মণ ধান উৎপাদিত হয়। যদি মোট আবাদি জমির শতকরা দুই ভাগ জমিতে বিঘা প্রতি শতকরা ১০ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি করা যায় তাহলে চাল আমদানির প্রয়োজন পড়বে না,” জানান কৃষি ও পানি বিশেষজ্ঞ কিউ আর ইসলাম।