সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রীদের সাইকেল কিনে দিতে বললো কেন্দ্রিয় ব্যাংক

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.03.04
BD-girls ‘সাইকেল বালিকা’রা সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে প্রতিদিন ৮-১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে।
অনলাইন

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রীরা যাতে বাইসাইকেলে চড়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে সে জন্য ব্যাংকগুলোকে বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক তফসিলী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে ১০টি সাইকেল দিতে হবে।

এর আগে জানুয়ারি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় জামানতবিহীন স্বল্পসুদে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের সাইকেল কিনতে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এই ঋণ বিতরণ শুরু করেছে।

দেশের উত্তরাঞ্চলের ছাত্রীরা শিক্ষার আলো পেতে প্রতিদিন দূর-দুরান্ত পাড়ি দেয়। তাদের কেউই ধনী ঘরের সন্তান নয়। কারও বাবা, মা কৃষি কাজ করেন আবার কেউবা দিনমজুর। সঞ্চয় সমিতি থেকে কিস্তিতে টাকা নিয়ে মেয়েদের পড়াশোনা ও যাতায়াতের জন্য অনেক অভিভাবক কিনে দিয়েছেন বাইসাইকেল।

বাংলাদেশ ব্যাংক দরিদ্র পরিবারের এমন ছাত্রীদের বিনামূল্যে সাইকেল দিতে বলেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় এই সাইকেল কিনে দেবে। দেশের সবগুলো তফসিলী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশ অবিলম্বে কার্যকর করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।

হিসেব করে দেখা গেছে, দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯০ এর কাছাকাছি। একেকটি প্রতিষ্ঠান ১০টি করে সাইকেল দিলে ৯০০ ছাত্রী বিনামূল্যে একটি করে সাইকেল পাবে। ১০টি সাইকেলের মোট দাম এক থেকে দেড় লাখ টাকা, যা একেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ব্যাপার নয়।

“দেশের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের স্কুল-কলেজগামী নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়ন তথা দেশের সার্বিক টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আপনাদের সিএসআর কার্যক্রমের আওতায় তাদের মাঝে প্রাথমিকভাবে কমপক্ষে দশটি সাইকেল প্রদান করার জন্য পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে,” ২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবেল ডিপার্টমেন্টের প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়।


ওই বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মনোজ কুমার রায়ের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “সুবিধাবঞ্চিত ছাত্রী ছাড়াও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অগ্রাধিকারমূলক সিএসআর কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্যও আপনাদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।’’

উত্তরাঞ্চলের জন্য এই প্রজ্ঞাপন দেওয়া হলেও ওই অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর অন্যতম হচ্ছে পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট। পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব ছাত্রী সাইকেল চালায় তাদের বলা হয় ‘সাইকেল বালিকা’। তাঁরা সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে প্রতিদিন ৮-১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে।

এসব সাইকেল বালিকা ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং সামাজিক কুসংস্কারকে উপেক্ষা করে ছেলেদের মতোই সাইকেল চালিয়ে জেলা এবং উপজেলা সদরের স্কুলে পড়তে যাচ্ছে।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা সদরের পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়।

“প্রথম দিকে গ্রামের মানুষ মেয়েদের সাইকেল চালানোর বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখত না। তবে এখন সবার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। স্কুলে কয়েকটি সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণ করতে হয়েছে। কয়েকশ ছাত্রী রোজ সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে,” বেনারকে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম।

প্রথম যে ছাত্রীটি ওই এলাকা থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে গিয়েছিল তার নাম শিখা রানি। আর এখন তার পথ অনুসরণ করে অনেকেই স্কুলে যায় বাইসাইকেল চালিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন এনজিও’র মাঠকর্মী হিসেবে গ্রামে যারা কাজ করেন তাদের সাইকেল চালানো বাধ্যতামূলক। তাদের দেখেই এগিয়ে আসে গ্রামের ছাত্রীরা।

রাজধানী ঢাকার অনেক মেয়েও এখন সামাজিক বাধা পেরিয়ে পথের সঙ্গী হিসেবে সাইকেলকে বেছে নিয়েছেন। সংখ্যাটা অনেক বেশি না হলেও ক্রমবর্ধমান।

“যানজটের শহরে সাইকেল যেমন সময় বাঁচায় তেমনি যাতায়াত খরচও কমায়। আর স্বাস্থ্যগত সুবিধা তো আছেই,” বেনারকে জানান দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিখা রানি, যিনি পুরোনো ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে কোচিং করতে যান ফার্মগেটের একটি কোচিং সেন্টারে।   

ঢাকায় নারীদের সাইকেল চালানোকে আরও সহজ করে দিয়েছে বিডি সাইক্লিস্টস নামের একটি সংগঠন। সাইকেল রাইডকে জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছে তারা। এই সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা এখন অর্ধলাখের ওপরে।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।