ছাদে বাগান করতে চাইলে সহায়তা করবে গ্রিণ ব্যাংকিং প্রকল্প
2015.07.15
ইট–পাথরের জঞ্জাল বলে পরিচিত ঢাকার অনেক ছাদেই এখন দেখা যায় ফল–ফুলের বাগান। পরিবেশকে বাসযোগ্য রাখতে আর বুক ভরে নিশ্বাস নিতে গত কয়েক বছর ধরে এই বাগান কার্যক্রমের বিকাশ ঘটছে।
এখন ঋণ দিয়ে ছাদ বাগান কার্যক্রমকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের অন্যান্য ব্যাংকেও পরিবেশ রক্ষার এই উদ্যোগে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
“অপরিকল্পিত বাড়ি বা ভবন নির্মাণের ফলে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা গ্রামের তুলনায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ছাদে বাগান করা হলে এই তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনা সম্ভব,” এ ধরনের ঋণ বিতরণ কমর্সূচীর উদ্বোধন করতে গিয়ে একটি গবেষণার বরাত দিয়ে একথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
গ্রিন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংক নানা উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রম চালু করেছে। ব্যাংকের ২০টি শাখায় পাইলট গ্রিন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এইসব প্রকল্পের অধিনে রয়েছে, প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার এবং পরিবেশ রক্ষায় ছাদে সবজি ও ফল বাগান এবং নার্সারির জন্য ঋণ প্রোডাক্ট চালু করা।
“ছাদ বাগান ও নার্সারির জন্য অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ বাজেট থেকে অনুমোদন করা ঋণ বিতরণ মাইলফলক হয়ে থাকবে,” জানান ড.আতিউর।
পরিবেশ সুরক্ষায় নার্সারি ও ছাদে বাগান কার্যক্রমে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “পরিবেশবান্ধব এ ধরনের সবুজ ব্যাংকিংয়ে অন্যান্য ব্যাংকগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।”
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ভবনের ছাদে বাগানের পাশাপাশি একটি নার্সারি, শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে পাঠদানের জন্য একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং একটি কৃষি ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছে। এই উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রমটিকে মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঢাকার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক সামিনা মজুমদার তুলি।
“আমরা গবেষণায় পেয়েছি যে ওই এলাকায় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পযর্ন্ত ১০ থেকে ১২ শতাংশ মিন রেডিয়েন্ট তাপমাত্রা (পাকা জায়গার ওপর সূযর্রশ্মি পড়ে বিকরিত হয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ) বেড়ে যায়। এটা রোধে বাড়িঘরের চারপাশে খোলা জায়গা পাকা না করে গাছ ও ঘাস লাগানো, বাড়ির ছাদে গাছপালা ও ফুল গাছ লাগানো উচিত,” বেনারকে জানান সামিনা মজুমদার।
আরেকটি উদহারণ দিয়ে সামিনা বলেন, এমনও দেখছি আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তখন তাপমাত্রা ৩২ডিগ্রি সেলসিয়াস।
“ ছাদে একাধারে সবজি, ফুল ও ফল চাষ, নার্সারি এবং বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবে ব্যবহারসহ বহু নতুন উদ্ভাবনা সংযোজন হয়েছে। এসব উদ্ভাবনী কাজকে এগিয়ে নিতে ব্যাংকগুলো ঋণের ব্যবস্থা করলে তা প্রকারন্তরে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে,” বেনারকে জানান পরিবেশ বিষয়ের লেখক মোহাম্মদ হোসাইন।
গ্রিণসেভারস ও গ্রিণ রুফ মুভমেন্ট
ছাদ বাগান আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কমপক্ষে দুটি সংগঠন কাজ করছে। ছাদ বাগানের শৌখিন মালিকদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট নামে একটি সংগঠন রয়েছে। মাত্র তিন বছর আগে ২০১১ সালে যাত্রা করেছে গ্রিনসেভারস নামে আরেকটি সংগঠন।
সবুজপ্রেমী যেসব মানুষ শহরের এক চিলতে পরিসরে বা বাড়ির ছাদে ফুলের বাগান অথবা সবজি চাষ করতে চান, তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় গ্রিনসেভারস।
গত তিন বছর ধরেই বাড়ির ছাদে, বারান্দায় কিংবা বাড়ির ছোট্ট আঙিনায় বাগান করার ব্যাপারে আগ্রহীদের পাশে থাকছে তারা। কেউ বাগান করার ইচ্ছা পোষণ করলেই হলো, বাকি দায়িত্ব সংগঠনটির।
“পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশের যত্নের বিকল্প নেই। আর এ উদ্দেশ্যেই গ্রিনসেভারস কাজ করে যাচ্ছে,” বেনারকে জানান গ্রিনসেভারসের জেনারেল সেক্রেটারি তানিয়া তাসলিমা।
কমলাপুরে কমলা গাছ আর কলাবাগানে কলাগাছ। এভাবে শেওড়াপাড়া, কাঁঠালবাগান, নিমতলি ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গার নামানুসারে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করে সংগঠনটি।
“হয়তো একটু সময় লাগবে, তবে একদিন ঠিকই সবখানে সবুজের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে,” জানান তানিয়া।
বোতলের পানি খেয়ে হয়তো পাত্রটি ফেলেই দেওয়া হতো, কিন্তু গাছ লাগিয়ে সেটাকেও কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে ভাবনাও গ্রিনসেভারস মাথায় নিয়েছে।
রাজধানীর রাইফেলস, রাজউকসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ে অক্সিজেন ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে গ্রিনসেভারস। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন টিফিনের টাকা থেকে কিছু বাঁচিয়ে অক্সিজেন ব্যাংকে ফেলে। নির্দিষ্ট সময় পরে সেখানে জমা হওয়া অর্থ দিয়ে ওদেরই স্কুলে বাগান করা হয়।
“প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উপকরণ ও সদস্যদের অর্থায়নে চলছে সব কার্যক্রম। গ্রিনসেভারসের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে প্রায় ৪০০ পরিবেশপ্রেমী, যাদের মধ্যে রয়েছে কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই,” জানান তানিয়া তাসলিমা।