জঙ্গি দল শহীদ হামজা ব্রিগেডের ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.03.17
BD-hamza গত বছরের বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামে শহীদ হামজা ব্রিগেডের ২৮ সদস্যকে গ্রেপ্তারকরে র‍্যাব। ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
ফোকাস বাংলা

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের (এসএইচবি) ১১ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে র‍্যাব। ওই জেলার হাটহাজারী, হালিশহর ও বাঁশখালীতে অবস্থিত সংগঠনটির তিনটি আস্তানা থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধারের পর গত বছর নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের নাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে।

এর মধ্যে হালিশহরে এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের এক বছর পর শহীদ হামজা ব্রিগেডের ১২ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ১ নম্বর লেনের ১/১৯ নম্বর বাড়ির দোতলা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের পর এই মামলা করে র‍্যাব।

“মামলায় অভিযুক্ত ১১ আসামির মধ্যে একজন পলাতক, বাকিরা কারাগারে আছেন,” বেনারকে জানান র‍্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জালাল উদ্দিন আহাম্মদ, যিনি বুধবার রাতে চট্টগ্রাম আদালতের জিআর (সাধারণ নিবন্ধন) শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন।

বিস্ফোরক উদ্ধারের দিন ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন কক্সবাজারের পেকুয়া থানার বাসিন্দা ফয়জুল হক, তার বোন রহিমা আক্তার, বোনের ছেলে জায়েদুল্লাহ ও বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল হাই।

অভিযোগপত্রে নাম থাকা বাকিরা হলেন; হামজা ব্রিগেডের সামরিক কমান্ডার মনিরুজ্জামান ওরফে ডন, আনোয়ার হোসেন, মো. শামসুদ্দিন, রাকিব হাসান, নাসির উদ্দিন খান, পারভেজ এবং ফয়জুলের ছোট ভাই আজিজুল হক। আরেক আসামি পারভেজ পলাতক রয়েছেন।

“মামলায় ৪৮ জন সাক্ষী রয়েছে। তবে শুনানির তারিখ এখনও ঠিক হয়নি,” বেনারকে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান।


মূল আসামির নাম বাদ

ওই মামলার ১২ জন আসামির মধ্যে প্রধান আসামি ছিলেন শহীদ হামজা ব্রিগেডের প্রধান আল্লাম লিবদি ওরফে জুনায়েদ। ধারণা করা হয়, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের নাগরিক।

র‍্যাব সূত্র জানায়, মামলায় নাম থাকলেও ঠিকানা না পাওয়ায় তার নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। তবে ঠিকানা পেলে পরবর্তীতে তার নাম যুক্ত করা হবে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের একজন আইনজীবী বেনারকে জানান, এটি খুবই হাস্যকর একটি বিষয়। ১০ জন আসামির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। কেউ তাঁদের মূল নেতার নাম বলতে পারেনি, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।


শহীদ হামজা ব্রিগেড

র‍্যাব সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ওই সংগঠনটির ২৮ নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে এই প্রথম একটি মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে।  

এ ছাড়া ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীতে জঙ্গি সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুই দিন পর বাঁশখালীর পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার হন আরও পাঁচজন।

এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি হালিশহরের ওই বাসায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত ১২ আসামির মধ্যে  ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা সরঞ্জামের মধ্যে ছিল ৭৬টি বোমা, ২৪ রাউন্ড গুলি ও পাইপ বোমা তৈরির জন্য খালি পাইপ।

বিস্ফোরক দ্রব্যের মধ্যে ছিল ৫০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ডাস্ট, ৩৫ কেজি পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ১০ কেজি সালফার, আট কেজি সোডিয়াম অ্যামাইড, পাঁচ লিটার নাইট্রোবেনজিন, চার কেজি আর্সেনিক ডি সালফাইড, ২৮শ গ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও দুই কেজি চারকোল।

এ ছাড়া ৮৬ জোড়া জাঙ্গল বুট, ৯৭ জোড়া পিটি শু, ৯৬ জোড়া নাইলন বেল্ট ও ১৮৫ জোড়া মোজা পাওয়া যায় ওই বাড়িতে।

ওই সময় সংবাদ ব্রিফিংয়ে র‍্যাব জানায়, “গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, নাশকতার জন্যই এসব বিস্ফোরক ওই বাড়িতে জড়ো করা হয়েছিল।”

র‍্যাবের দাবি, ২০১৩ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রামের নগরের ফয়’স লেক এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় বসে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ গঠন করে জঙ্গিরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্রদের এই সংগঠনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরে তাদের পাহাড়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

“বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শহীদ হামজা ব্রিগেড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সংগঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে,” সাংবাদিকদের জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন।


জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে

২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট রাতে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি থেকে চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা ও সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ তিনজনকে আটক করে র‍্যাব-৭। পরে তাদের চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও হাটহাজারী থানায় শহীদ হামজা ব্রিগেডের সদস্যদের নামে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত বছর ১৮ আগস্ট হামজা ব্রিগেড নামের একটি জঙ্গি সংগঠনকে অস্ত্র কেনার জন্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা জোগান দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসানুজ্জামান লিটন ও জজ কোর্টের আইনজীবী মাহফুজ চৌধুরী বাপনসহ ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা।

দায়ের করা দুটি মামলায় অভিযোগ গঠনের আগ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে ২২ ফেব্রুয়ারি জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।