বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নকারীদের একজনকে গ্রেপ্তার
2016.01.28
চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ‘জড়িত’দের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। যা নিয়ে পুলিশের তদন্ত ক্ষমতা নিয়ে আবারো প্রশ্নে উঠেছে।
ঘটনার নয় মাস পরে বুধবার রাতে ঢাকার চকবাজার এলাকার খাজী দেওয়ান লেনের ৭৭ নম্বর বাসা থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নাম মো. কামাল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হোসেন সরদার জানান ‘ওই ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আটজনকে সনাক্ত করেছিল। আটক কামাল তাদেরই একজন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।’
এদিকে গ্রেপ্তারকৃত কামালকে দুইদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পরেই ‘আসামি’ আটক
ঘটনার পরে দোসীদের চিহ্নিত করা গেলেও কাউকে আটক ছাড়াই যৌন নিপীড়নের ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। গত ডিসেম্বরে ‘কাউকে শনাক্ত করা যায়নি’ উল্লেখ করে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তারও প্রায় এক মাসের মাথায় জড়িত একজনকে আটক করা হল।
পুলিশ বলছে, আগেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও নতুন করে শুরু করার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষবরণে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিষয়টি পুলিশের নজরে থাকায় একজন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এখন মামলাটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করবো।’
ওই ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তবে কামাল একজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হলেও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তথ্য দাতার নাম পরিচয় এখনই বলা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পেছনের ঘটনা
গত বছর ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের উৎসবে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে একদল যুবক ভিড়ের মধ্যে নারীদের ওপর চড়াও হয়। শুরুতে সরকার ও পুলিশ ঘটনাটি যৌন হয়রানি বলে স্বীকার করতে গড়িমসি করে। তবে বিভিন্ন ছাত্র ও নাগরিক সংগঠনের দাবির মুখে এবং এক পর্যায়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলা এবং তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ঘটনার প্রায় একমাসের মাথায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ছবি দেখে আটজন নিপীড়ককে চিহ্নিত করার কথা জানান পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক। এসব চিহ্নিত অভিযুক্তদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।
তবে আট মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে গত ১৩ ডিসেম্বর মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। আদালতকে দেওয়া ওই প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস জানান, পুলিশ অপরাধী কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।
পুলিশের অদক্ষতার প্রমাণ
এ ঘটনা পুলিশের অদক্ষতা প্রমাণের পাশাপাশি ‘ইচ্ছে করলেই তারা পারে’ সে বিষয়টিও প্রমাণ করে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বেনারকে বলেন, শুরুতে ওই ঘটনা পুলিশ বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কেউই স্বীকার করতে চায়নি। অনেক নাটকীয়তার পরে মামলা করা হলেও দীর্ঘ আটমাসেও তারা কাউকে আটক করতে সক্ষম না হয়ে পুলিশ হঠাৎ করে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কীসের এত তাড়া ছিল। আবার তার একমাসের মধ্যে একজনকে আটক করা হল। যা পুলিশের খামখেয়ালিপনা ও স্ববিরোধিতার প্রমাণ দেয়। আবার তারা ইচ্ছে করলেই যে যেকোন অপরাধীকে আটক করতে পারে, সেটাও প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, একজনকে যেহেতু পুলিশ ধরতে পেরেছে আশা করি চিহ্নিত বাকি আসামিরাও শীঘ্রই আটক হবে। নির্যাতিতরা সুবিচার পাবে।’
‘নিরাপরাধ কেউ যাতে শিকার না হন’
এদিকে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অপরাধী ধরার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিরাপরাধীকে সাজা না দেওয়া।
এবিষয়ে সালমা আলী বলেন, ‘অপরাধী আটক হোক, তাদের বিচার হোক সেটা যেমন চাই, তেমন কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন ঘটনার শিকার না হন সে বিষয়টিও নজরে রাখতে হবে। যৌন নিপীড়নের ওই ঘটনায় আটক এই ব্যক্তির ক্ষেত্রেও যেন এমনটি না হয়। কারণ, আমাদের পুলিশের হাতে নিরপরাধীদের সাজা পাওয়ার নানা উদাহরণ রয়েছে। তেমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি এক্ষেত্রে না ঘটে।’
‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি’
এদিকে দীর্ঘদিন পরে হলেও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত আসামি আটক হওয়ায় ‘সস্তি’ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। তারা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন।
‘দোষীদের এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে আর কেউ কোনদিন যৌন নিপীড়নের মত বর্ববর ঘটনা না ঘটনাতে পারে। যাতে সবাই নির্বিঘ্নে যেকোন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারে।’- বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মমতাজ পারভীন।