দুই সম্পাদকের বিচার হবে, বললেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী
2016.02.22
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
BD-hasina প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর রাষ্ট্রীয় বাসভবনে বক্তব্য রাখছেন। জুন ৭, ২০১৫
এএফপি

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ছেলের মতো করেই দেশের দুই পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, ৯ বছর আগে তাঁর বিরুদ্ধে দূর্নীতির ভিত্তিহীন সংবাদ ছাপানোর জন্য।

ঢাকায় একটি আলোচনা সভায় ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেন ২০০৭-৮ সালের দিকে এই দুই সম্পাদক তাঁর বিরুদ্ধে দূর্নীতির মিথ্যা সংবাদ ছেপেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে ঠিক সেভাবেই একদিন এদের এই সংবিধান ধ্বংস করার বিচার হবে।’ উল্লেখ্য, এই দুটি পত্রিকা ইংরেজী ও বাংলায় সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা।

প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির একদিন পর। যেখানে তারা এই দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে সকল মামলা তুলে নিতে বলেন।


মানহানি ও রাষ্ট্রবিরোধিতার মামলা

ফেব্রুয়ারির শুরুতে মাহফুজ আনাম একটি টেলিভিশনের টকশোতে স্বীকার করেন, ২০০৭-৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি সংক্রান্ত সেনা গোয়েন্দাদের সরবরাহকৃত তথ্য তিনি ছেপেছিলেন।

হাসিনার আওয়ামী লীগ ও খালেদা জিয়ার বিএনপি যখন রাজপথে সংঘর্ষে লিপ্ত ২০০৭ সালের ১১ নবেম্বর সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

সে সময় সেনা শাসকদের তৎপরতায় দুই দলের শীর্ষ দুই নেত্রী দূর্নীতির অভিযোগে আটক ও কারাগারে বন্দি হন। প্রায় একবছর কারাবাসের পর ২০০৮-এ নির্বাচনকে সামনে রেখে তাঁদেরকে মুক্তি দেয়া হয়। সে দফা নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে ক্ষমতায় আসেন। তখন থেকে হাসিনার দল ও জোটই সরকারে বহাল রয়েছে।

ডেইলি স্টার সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা ওই সময়ের মধ্যে দূর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন রাজনীতিক ও ব্যক্তির নাম প্রকাশ করে।

“আমার সাংবাদিকতার জীবনে সেই সব সূত্রবিহীন তথ্য প্রকাশ ছিল সবচেয়ে বড় ভুল”, ৯ বছর পর মাহফুজ আনামের এই স্বীকারোক্তির পর পরই হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে বক্তব্য রাখেন। সে সঙ্গে সারাদেশে উৎসাহী দলীয় সমর্থকরা কয়েক ডজন মামলা দায়ের করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আনামের বিরুদ্ধে ৫৪টি মানহানির মামলা ও ১৫টি রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে  ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’-এর অভিযোগ সহ ৫৫টি মামলা রয়েছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, মাহফুজ আনাম নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে ডিজিএফআই (ডাইরেক্টর জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)-এর সরবরাহ করা তথ্য না যাচাই করেই ছাপিয়েছেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তাঁর পত্রিকার শ্লোগান হচ্ছে ভয়মুক্ত সাংবাদিকতা, এটা কি ভয়মুক্ত সাংবাদিকতা? তবে কি তিনি ডিজিএফআই-এর কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন?”

তিনি ‘মাইনাস টু ফরমুলা’র উল্লেখ করে বলেন যদি তাঁকে এবং খালেদাকে রাজনীতি থেকে সরানোর কাজে তিনি যুক্ত ছিলেন তাহলে ‘তিনি এই কাজে বিক্রি হয়ে থাকলে আমার কোনো বক্তব্য নাই’। তাকে রাজনীতি থেকে সরানোর চেষ্টাকে তিনি জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার সামিল বলে উল্লেখ করেন।


হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিন্দা

রোববার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবার জন্য সরকারের নিন্দা জানায়। সংস্থার এশিয় পরিচালক ব্রাড আডমস বিবৃতিতে জানান, “দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ এনে দেশটির গণমাধ্যমে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে”।

বলা হয়, “সংসদের প্রায় সবগুলো আসনের নিয়ন্ত্রন নেয়া এই সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের উচিত হবে মুক্ত সাংবাদিকতাকে সুরক্ষা দেয়া নতুবা বাংলাদেশ একটি কর্তৃত্বপরায়ন রাষ্ট্রে পরিনত হবার ঝুঁকিতে চলে যাবে”।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।