আইএস–এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হিযবুত নেতা গ্রেপ্তার
2015.09.17
রাজশাহীতে বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া হিযবুত তাহরীরের বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহমুদুর রশিদ অভি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। সে নিজেকে ইয়েমেনের বংশোদ্ভূত আইএস’র এক দার্শনিক নেতার অনুসারী বলে দাবি করেছে।
“আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা বললেও বাংলাদেশে তাদের নেতা সম্পর্কে অভি এখনো মুখ খোলেনি,” বেনারকে জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনামুল কবির।
গত বুধবার ভোরে রাজশাহী মহানগরের তেরখাদিয়া এলাকার নিজ বাসা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা মাহমুদুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁকে স্থানীয় রাজপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
“তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পরিদর্শক আনোয়ার আলী,” বেনারকে জানান রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান।
বৃস্পতিবার ওই অভিযুক্ত জঙ্গিকে রাজশাহী মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। উল্লেখ্য, জঙ্গি গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাধারণত জামিন দেওয়া হয়না। তা ছাড়া আইসিটি আইনের মামলা জামিন অযোগ্য।
“বেশ বড় মাপের জঙ্গি অভির কাছ থেকে তথ্য পেতে ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন ছিল। আমরা সেটাই চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন,” জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক শরীফুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, অভির বাবা বজলুর রহমান একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিনি সাত বছর লিবিয়ায় চাকরি করেছেন।
পাঁচ বছর আগে বজলুর রহমান দেশে ফিরে নগরের তেরখাদিয়া এলাকায় বাড়ি তৈরি করে সেখানে বসবাস করছেন। সে বাড়ি থেকেই অভিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কাছ থেকে হিযবুত তাহরির ও আইএসের বাংলাদশের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে দাবি করে এনামুল কবির বলেন, “অভি গ্রেপ্তার হওয়ার পর যে ওয়েব পেজে তাদের সংগঠনের প্রচারণা চালানো হয় সেটি তারা ‘রিমুভ’ করে দিয়েছে।”
অভির বরাত দিয়ে পিবিআই-এর এই কর্মকর্তা আরও জানান, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য বিদেশ থেকে অর্থ আসতো। এ ছাড়া তাদের সদস্য ও সমর্থকদের কাছ থেকে চাঁদার মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
“তাদের কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেখানে তারা চাঁদার অর্থ জমা দিতো বলেও অভি জানিয়েছে,” জানান এনামুল।
উল্লেখ্য, অভির চাচা বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি।
কিছুদিন পরপর গ্রেপ্তার হচ্ছে হিযবুত কর্মীরা
কিছুদিন পরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা ধরা পড়ছে, যারা বাংলাদেশে 'খিলাফাহ' বা খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ওই দলের সাতজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং অপরাধ গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি)। গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হিযবুতের অনলাইন সম্মেলন করার সঙ্গে এদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।
এরা হচ্ছে একরামুল খায়ের ওরফে অপু, মো. আব্দুল কাইয়ুম ওরফে কাইয়ুম, মো. নাজমুল হাসান ওরফে নিপন, মো. ইব্রাহীম শেখ, মো. রাশেদুল ইসলাম শেখ, মো. আরিফুল ইসলাম এবং এ এস এম তারেক আমিন। এদের বয়স ২৫ থেকে ৩২ এর মধ্যে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের লিফলেট, জিহাদি বই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, গত ২৩ আগষ্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন শাহী মসজিদের সামনে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল ডিবি পুলিশ। এরা হচ্ছে, আলতামাস আহম্মেদ বাবু ও সৈয়দ জানে আলম রুবেল।
তাদের কাছ থেকেও বিপুল পরিমাণ জিহাদি ও সংগঠনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই জঙ্গি এই সংগঠনের কর্মকাণ্ড। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘শক্ত’ নজরদারি এড়িয়েই তারা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যেও নানা রকম উসকানিমূলক বার্তা ছড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ওই সংগঠনটি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এদের গতিবিধি অনুসরণ করে যাচ্ছে।