যশোরে আরো এক হিযবুত তাহরীর নেতা আটক
2015.09.21
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের বিভাগীয় সমন্বয়কারী সন্দেহে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তানজীব আহমেদ আশরাফুল নামে ওই যুবককে রোববার ভোরে যশোরের পুরাতন কসবা এলাকা থেকে আটক হয়।
“পেশায় ছাত্র হলেও তিনি যশোরের হিজবুত কর্মীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। তার বিরুদ্ধে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”- বলে বেনারকে জানান যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আশরাফুল জেলা শহরের পুরাতন কসবা কদমতলা এলাকার মিশর প্রবাসী আব্দুল মজিদের ছেলে। আনিসুর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সকালে আশরাফুলকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তার বাবা মিশরে থাকেন। উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপটি সেখান থেকে তিনি আশরাফুলকে পাঠিয়েছেন। ওই ল্যাপটপে জঙ্গি সংগঠন আইএস’র কর্মকাণ্ডের বেশকিছু ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। এছাড়া ল্যাপটপের কিছু ফাইল পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ সেগুলো খোলার চেষ্টা করছে।
আইএস’র ভিডিও পাওয়া গেলেও আন্তর্জাতিক এই জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে আশরাফুলের যোগাযোগ আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে আনিসুর রহমান বেনারকে বলেন, “আইএস প্রসঙ্গে মুখ খোলেনি আটক আশরাফুল। বেশ শক্ত লোক মনে হচ্ছে তাকে। তাই তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এজন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। আজ (মঙ্গলবার) তার রিমান্ডের শুনানি হবে।”
‘জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত পরিবার’
যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বেনারকে বলেন, আশরাফুলের দুই বোন এবং দুলাভাইও জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। তাদেরকেও খুঁজছে পুলিশ। তারা ভাইবোনসহ পুরো পরিবারকে জঙ্গি কার্যক্রমে ইন্ধন দিয়ে থাকে তার মিশর প্রবাসী বাবা।
দুই বছর আগে জঙ্গি কার্যক্রমের বিষয়ে তার ‘মগজ ধোলাই’ করা হয় বলে আশরাফুল পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, জানায় পুলিশ সূত্র।
কার্যক্রম বাড়াতে হিযবুতের অনলাইন কনফারেন্স
পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, গত ৪ সেপ্টেম্বর হিযবুত তাহরীরের নেতারা একটি অনলাইন কনফারেন্সের মাধ্যমে সভার আয়োজন করে। দেশব্যাপী নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটির কার্যক্রম সক্রিয় করাই তাদের উদ্দেশ্য। সে কনফারেন্সের ভিডিওচিত্র ইউটিউবেও পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে অংশ নেন আটক হিযবুত নেতা আশরাফুল।
আনিসুর রহমান বেনারকে আরো বলেন, “হিযবুত নেতারা নিজেদের তৎপরতা বাড়ানোর জন্য চলতি মাসের ৪ তারিখ একটি অনলাইন কনফারেন্স আয়োজন করে। সেখানে সারা দেশের চার থেকে পাঁচজন হিযবুত নেতা বক্তৃতা দেয়। সেই ভিডিও সম্মেলনে আশরাফুল অংশ নিয়েছিলেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।”
কেন্দ্রীয়ভাবে পুলিশ ও র্যাবের একটি বিভাগ তাদের অনলাইন কার্যক্রমে নজর রাখছে এবং এসব নেতাদের আটকের চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হিযবুত তাহরীরের আঞ্চলিক প্রধান মাহমুদুর রহমান অভিকে রাজশাহী থেকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা। এ সময় তাঁর কাছ থেকে বিপুল প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে ইয়েমেনের বংশোদ্ভূত আইএস’র এক দার্শনিক নেতার অনুসারী বলে দাবি করেছেন বলেও জানায় পুলিশ।
সেই অভিকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যশোরের হিজবুত নেতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান যশোর সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা।
পুলিশের নজর এড়াতে পারছে না জঙ্গিরা
ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে কিছুদিন পরপরই নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা ধরা পড়ছে। যারা বাংলাদেশে 'খিলাফাহ' বা খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত এই একটি সংগঠনই নয়, দেশের সব ধরনের জঙ্গি সংগঠনই পুলিশের নজরে আছে। কিছুদিন পরপর জঙ্গি আটকের খবর তারই প্রমাণ দেয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “দেশ থেকে জঙ্গি এবং সন্ত্রাস মুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেখানেই জঙ্গি কার্যক্রম সেখানেই পুলিশের অপারেশন চলছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ এসব জঙ্গি সংগঠন যেন কোনভাবেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়িয়েই তারা প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যেও নানা রকম উসকানিমূলক বার্তা ছড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ওই সংগঠনটি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এদের গতিবিধি অনুসরণ করে যাচ্ছে।