বুদ্ধিজীবীদের হুমকিদাতা ও আইএসের প্রচারক গ্রেপ্তার
2015.11.25
ইসলামিক স্টেট-আইএস ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে লেখক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ঢাকায় এক ‘জামায়াত সমর্থক’কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ছাড়া আইএস এর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে নাহিদ হাসান নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
বাংলাদেশে আইএস আছে কি নেই সেই বিতর্কের মধ্যে আই এস সন্দেহ গ্রেপ্তার ও বিচার চলছে। সরকার গত প্রায় মাসখানেক ধরে বলে আসছে দেশে আইএস জঙ্গি নেই।
বুদ্ধিজীবীদের হুমকিদাতা গ্রেপ্তার
মঙ্গলবার রাতে তেজগাঁও এলাকা থেকে আব্দুল হক নামে ২৬ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, সে জামায়াত সমর্থক।
“অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও মুনতাসির মামুন এবং কয়েকজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,” বেনারকে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম ।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ১৫৩ জনকে হুমকি দেওয়ার তথ্য নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধানে নেমেছিল। সেই অনুসন্ধানেই সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়।
“তিনি ফাইজুর রহমান, সালেহ আহমেদ ফুয়াদ ও মাওলানা সাদ- এই তিন নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন। স্পুফিং (এক ঠিকানার বদলে গোপনে অন্য ঠিকানা ব্যবহার করা ) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি হুমকি দিয়ে আসছিলেন।”
তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানান মনিরুল।
গত ১০ নভেম্বর মোবাইল এসএমএসে হত্যার হুমকি পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সেখানে বলা হয়, ব্লগারদের পক্ষে দাঁড়ালে তাকে ‘চাপাতির আঘাতে’ মরতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লেখালেখিতে সব সময় সক্রিয়। হুমকি পাওয়ার পর ওইদিনই গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।
এরপর গত ১৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে যে নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তার মালিককে আটক করেছিল পুলিশ। পরে তদন্তে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি ‘নির্দোষ’। তার নম্বর ‘ক্লোন করে’ আরেকজন ওই হুমকি দিয়েছে।
যে ব্যক্তি হুমকি দিয়েছিল তাকে শনাক্ত করা হলেও গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে সেদিন জানিয়েছিলেন তিনি।
গত রোববার জঙ্গিদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়ে ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বিশিষ্ট লেখক মুনতাসির মামুন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চারজন লেখক ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট খুন হওয়ার পর সম্প্রতি এক প্রকাশককেও হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই ঘটানো হয় চাপাতির আঘাতে। এসব হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার কথা পুলিশের তদন্তেও এসেছে।
আইএসের প্রচারক ’জিহাদি জন’ গ্রেফতার
ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে নাহিদ হাসান নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) গভীর রাতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, আইএস পরিচয়ে ‘জিহাদি জন’ নামে নাহিদ হোসেন ইন্টারনেটে প্রচার ও প্রচারণা চালাতেন।
এই বিষয়ে বুধবার মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার নাহিদ ‘ইসলামিক স্টেট বাওলা আল-ইসলামীয়া’ নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে দেশে ব্লগার ও প্রকাশকদের ওপর হামলার ঘটনায় জঙ্গি সংগঠন আইএস এর নামে দায় স্বীকার করে আসছিল।
এছাড়া খালিদ বিন ওলাদসহ বিভিন্ন নামে নাহিদ ফেসবুক আইডি খুলে জঙ্গি প্রচারণা চালিয়ে আসছিল বলেও জানান তিনি। তবে, আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে নাহিদের যোগযোগের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন মনিরুল ইসলাম।