লিবিয়ায় বন্দিদশা থেকে দুই বাংলাদেশির মুক্তি, স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে
2015.03.25
"এতদিন পর কথা হয়েছে মাত্র এক মিনিট। ক্ষীণ গলায় শুধু বলল, আমি আনোয়ার । ভাল আছি। আমার জন্য দোয়া করো", ২৫ মার্চ রাত নয়টায় বেনার নিউজকে জানালেন মারুফা খাতুন।
মারুফা লিবিয়ায় ইসলামিক স্টেট -আইএস জঙ্গিদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। ধমর্ের নামে সন্ত্রাস করা ওই গোষ্ঠী কেন তাদের ছেড়েছে তা এখন পযর্ন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা ।
আনোয়ার ও হেলালউদ্দিন নামের দুই বাংলাদেশি গত ২৪ মার্চ রাত নয়টার দিকে জঙ্গিদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান। তাঁদের বেঁচে থাকার খবর পেয়ে দুজনেরই পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
৬ মার্চ লিবিয়ার সিরতে শহরের আল ঘানি তেলখনিতে বন্দুকধারী জঙ্গিরা হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই জঙ্গিরা ১১ জন নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা করে।
পরে সেখান থেকে দুই বাংলাদেশিসহ নয়জন বিদেশিকে জিম্মি করা হয়। তাঁরা সবাই ভ্যালু অ্যাডেড ওয়েলফিল্ড সার্ভিসেস (ভিওএএস) নামের একটি অস্ট্রিয়ার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বাকি সাতজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ভিওএএসের পাশাপাশি লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, লিবিয়ার ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি ও তিউনিসিয়ায় অবস্থিত অস্ট্রিয়ার দূতাবাস অপহৃত অন্য ব্যক্তিদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে।
" উদ্ধারের পর দুই বাংলাদেশিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দূতাবাসকে এ কথা জানানো হয়েছে," টেলিফোনে জানান লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম।
এর আগে ২৪ মার্চ সকালে স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে মুক্তি পাওয়ার আশা প্রকাশ করে দোয়া চেয়েছিলেন হেলালউদ্দিন। আইএস জঙ্গিরাই টেলিফোনের সুযোগ করে দেয় বলে তাদের ধারনা।
হেলালউদ্দিনের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জে। পরিবারের সদস্যরা সেখানেই থাকেন।
তাঁর স্ত্রী আলেয়া বেগম জানান, ২৪ মাচর্ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লিবিয়া থেকে ফোন করেন হেলালউদ্দিন। প্রথমে তিনি তার সঙ্গে ও পরে বড় মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
" উনি বলেছেন, ওরা (জঙ্গিরা) তাঁদের অনেক দূরে নিয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে খাবার দিচ্ছে। আধপেটা খেয়ে অনেক দিন ধরে থাকতে হচ্ছে ," জানান আলেয়া।
অপহৃত অপর বাংলাদেশি আনোয়ারের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কাদিপুর ইউনিয়নে। ছেলে অপহৃত হওয়ার পর থেকে তাঁর বৃদ্ধ বাবা ইউনুছ মিয়া ও মা আফরোজা বেগম চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
আনোয়ারের স্ত্রী মারুফা খাতুন দুই সন্তান রাহিম (৬) ও রাইমাকে (৪) নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে থাকেন। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আজও তারা ফোন পেয়েছেন।
মারুফা খাতুন বেনারকে বলেন, " আমি এখন স্বামীর অপেক্ষায় আছি। স্বামী যে বেঁচে আছেন, তাতেই আমি খুশি। তবে ধর্মের নামে এমন বাড়াবাড়ির শিকার আর কেউ যেন না হয়।"