জামায়াতের ১৩ নেতার বিরুদ্ধে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ
2015.09.08
এবার পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে পুলিশ বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতাসহ ১৩ জনকে আটকের পর মঙ্গলবার বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম লুৎফর রহমান শিশির এই আদেশ দেন।
জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মিয়া, গোলাম পরওয়ারসহ ১৩ আসামিকে সোমবার পল্লবীর একটি বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। পরদিন আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান।
‘পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির পায়তারা’
আটকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা জানতে পারে, আসন্ন ঈদুল আজহায় তারা কোনো একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না হওয়াকে অজুহাত হিসেবে কাজে লাগিয়ে সেখানে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার পরিকল্পনায় ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।”
এসময় তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মূলক বই, লোহার রড, লাঠি ও ২০টি বোমা উদ্ধার করা হয় বলেও জানায় পুলিশ।
পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনেও বলা হয়, পল্লবীর একটি বাসা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছে বিস্ফোরক পাওয়া যায়। তারা কোরবানির ঈদের আগে পোশাক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বৈঠক করছিলেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
পুলিশের এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে আসামিদের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন আব্দুর রাজ্জাক, এসএম কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন আইনজীবী। তাদের দাবি, এসব নেতাদের কাছে বিস্ফোরক পাওয়ার অভিযোগ ‘সঠিক নয়’। কোন ধরনের নাশকতা বা অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যও তাদের ‘ছিল না’।
শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামি যারা
সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা হারুনুর রশীদ (৭৩), কাফরুল থানা জামায়াতের সভাপতি মো. তসলিম (৫০), জাহাঙ্গীর আলম (২৬), আবুল কালাম আজাদ (৭১), মো. মনসুর রহমান (৭১), জাকির হোসাইন (৫৯), এবিএম নুরুল্লাহ ওরফে মোহাম্মদউল্লাহ (৫৯), আবুল হাশেম (৫০), মো. সাব্বির (২২), মজিবর রহমান ভূইয়া (৪০) ও আশরাফুল আলম ইকবাল (২৭)।
ঢাকার পল্লবীর যে বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তার মালিক হারুনুর রশীদ। গোয়েন্দা পুলিশ পরে এই ১৩ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পল্লবী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে।
গোলাম পরওয়ারের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১২টি, মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৪৫টি ও তসলিমের বিরুদ্ধে ৯টি নাশকতার মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর মতিঝিল সিটি সেন্টারের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের একটি মামলায় আদালতে তাদের বিচারও চলছে।
খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য পরওয়ার জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর দলটির নায়েবে আমিরের দায়িত্বে আছেন।
সূত্র জানায়, জামায়াতের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মজিবুর ও পরওয়ারসহ কয়েকজনই সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত ইসলামে সক্রিয় ছিলেন।
`রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আটক’
এদিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সম্পূর্ণ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ ও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ থেকেই দলটির এসব নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আটক নেতাদের আইনজীবী এসএম কামাল উদ্দিন বেনারকে বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই জামায়াতের এসব নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনুপস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে এরাই দল পরিচালনা করে আসছিলেন। তাদেরকে আটক করার জন্যই মূলত এই ‘পোশাক শিল্পে অস্থিতরতা’ নাটক সাজিয়েছে পুলিশ। যে বাসা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়েছে সেখানে তারা একটি দাওয়াতে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। তাছাড়া এসব নেতাদের বয়স ৭০ বছরেরও উপরে। তাদের পক্ষে বোমা বহন করা সম্ভবই নয়। যদিও পুলিশ ‘বোমা সদৃশ বস্তু পেয়েছে’ বলে দাবি করেছে। তারা সম্পূর্ণ নিরাপরাধ। পুলিশ বানোয়াট অভিযোগ এনেছে।”
স্বাগত জানাল বিজিএমইএ
এদিকে পোশাক খাতের অস্থিরতা রক্ষায় পুলিশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শহিদুল্লাহ আজিম বেনারকে বলেন, “পোশাক শিল্প রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত। এ খাতে অস্থিরতা তৈরি হলে বিশ্বের কাছে ভাবমূর্তির সংকটে পড়বে বাংলাদেশ। প্রতিদিন যেখানে আমরা ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার যুদ্ধ করে যাচ্ছি, সেখানে এ ধরনের ষড়যন্ত্র অনভিপ্রেত। তাই যারাই এ ধরনের অস্থিরতা তৈরির সঙ্গে জড়িত থাক না কেন, সে যে দলেরই হোক, তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার আহবান জানাচ্ছি”।