বোমা হামলার ঘটনায় ১৭ জেএমবি সদস্যের ১০ বছর কারাদন্ড
2015.08.10
![BD-jmb BD-jmb](https://bendev.benarnews.org/bengali/news/BD-jmb-08102015142444.html/BD-jmb-620-aug2015.jpg/@@images/084ef3f5-c787-4f14-8c4a-6cdd4802149a.jpeg)
দশ বছর আগে বাংলাদেশে গাজীপুরে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদুন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১৭ সদস্যকে রবিবার ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট নিজেদের শক্তির জানান দিতে বাংলাদেশের ৬৩ জেলার বিভিন্ন স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। এর অংশ হিসেবে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সহ জয়দেবপুর থানাধীন নয়টি স্থানে সেদিন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সেদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা ২০ মিনিটের মধ্যে পূর্ব চান্দনা চৌরাস্তা মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্যের পাশে এবং ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ শহীদ মিনারের সামনে সহ বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা।
ওই ঘটনায় ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। সেবছরই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছিল।
সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক আবদুর রহমান সরদার বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের এ মামলার রায়ে দণ্ডিত ১৭ আসামির প্রত্যেককে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। ওই টাকা পরিশোধ না করলে তাদেরকে আরও এক বছর করে জেল খাটতে হবে। রায়ের সময় দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার ১১ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এরা হলেন- মো. রোকনুজ্জামান রোকন, মো. মামুনুর রশিদ মামুন, আরিফুর রহমান আরিফ ওরফে হাসিব ওরফে আসিফ ওরফে আকাশ, মো. নিজাম উদ্দিন ওরফে রেজা ওরফে রবি ওরফে কচি ওরফে রনি, আসাদ ওরফে জাহাঙ্গীর, নুরুল হুদা ওরফে দুরুল ওরফে হাসান, মো. মাহবুবুল আলম ওরফে মাহবুব, মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির, আফজাল হোসেন ওরফে আদম, কাওসার ও ওমর ফারুক।
এছাড়া রাসেল, আবদুল কাফি, এমএ সিদ্দিক বাবলু, রানা ওরফে আবদুস সাত্তার, মাসুম ওরফে আবদুর রউফ এবং রায়হান ওরফে উবায়েদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।
দণ্ডিতদের সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার চারজন আসামি হাসান, মাহবুবুর রহমান ওরফে মাহবুব, মো. দুরুল ইসলাম ওরফে জোবায়ের ও তৈয়বুর রহমান ওরফে হাসানকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। এদের মধ্যে তিনজন গত ১০ বছর ধরে জেল খেটেছেন।
রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন আসামিপক্ষ।
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের একমাত্র আইনজীবী ফারুখ আহমেদ বেনারকে বলেন, “আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এসব আসামিদের বিরুদ্ধে ৫০ জনের দেওয়া সাক্ষ্যে কোথাও তাদের নাম উচ্চারণ করা হয়নি। তাদেরকে কেউ ঘটনাস্থলে দেখেনি। এমনকি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামতের সঙ্গেও তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারপরেও তাদেরকে ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হল। তাদেরকে জেএমবি সদস্য উল্লেখ করা হলেও এ সংগঠনটির সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার কোন দালিলিক প্রমাণ নেই।”
তিনি আরো বলেন, “সরকারপক্ষ সঠিক সময়ে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থিত করতে না পারায় বিচার কাজ শেষ হতে দীর্ঘ ১০ বছর সময় চলে গেছে। আসামিদের মধ্যে চারজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত, যাদের মধ্যে তিনজন এই দীর্ঘ সময় জেল খেটেছেন। তাদের জীবনের এই ১০টি বছর কে ফেরত দেবে? কে তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে?”
তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসূলি মাহফুজুর রহমান আসামিপক্ষের এ বক্তব্য অস্বীকার করে বলেছেন, জঙ্গি সদস্য প্রমাণিত হওয়ার ফলেই আসামিদের শাস্তি দিয়েছেন আদালত। ১০ বছর আগে সারা দেশের সঙ্গে গাজীপুরে সংঘটিত বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে সাজাপ্রাপ্তদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল বলেই আদালতে প্রমাণ হয়েছে।”
এদিকে দীর্ঘদিন পরে হলেও জঙ্গিদের বিচারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সময়ে যখন চারিদিকে ব্লগার হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশের সমালোচনা চলছে, ঠিক সে সময় জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়ার এ ঘটনা মৌলবাদ সম্পর্কে এদেশের অবস্থানকে পরিস্কার করবে বলে অভিমত তাদের। তবে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার সমালোচনা করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বেনারকে বলেন, সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার মূল হোতা জেএমবি নেতা শায়েখ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইকে আটক করে অনেক আগেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু সেই গতিতে এগোয়নি ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সারাদেশের মামলাগুলোর বিচার। তবে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে সরকারের সচেতনতার কারণেই সে ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এ দেশে ঘটেনি।”
তিনি যোগ করেন-“দেশে যেভাবে ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটছে তাতে জাতিসংঘ মহাসচিব বানকি মুনসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের জন্য উপযুক্ত একটি জবাব হবে বিচারে এই জঙ্গিদের সাজা পাওয়ার ঘটনাটি। তবে সরকারকে জঙ্গি দমনে আরো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে করে দেশে আর একজন ব্লগারও প্রাণ না হারায়।”
সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার ঘটনার পর জেএমবি শুরা কমিটির প্রধান আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আবদুর রহমানকে ২০০৬ সালের ২ মার্চ সিলেটের শাপলাবাগ এলাকা থেকে এবং একই বছরের ৬ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বিচারের মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত হলে ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
গাজীপুরে আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার ২০১৩ সালে প্রদত্ত এক রায়ে ১০জন জেএমবি জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর গাজীপুরে আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে বোমা হামলার ওই ঘটনায় আইনজীবী আমজাদ হোসেন, গোলাম ফারুক, নুরুল হুদা ও আনোয়ারুল আজিমসহ আটজন নিহত হন।