জঙ্গি’ আস্তানায় অভিযান‏, ৭ জন গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে জেসমিন পাপড়ি
2015.12.24
BD-jmb মিরপুরে একটি ভবনে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭ জঙ্গি আটক ও হাত বোমা উদ্ধার করে।
বেনার নিউজ

রাজধানী ঢাকায়  এক ‘জঙ্গি’ আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার মিরপুরে ছয়তলা একটি ভবনে ১৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা রুদ্ধশ্বাস ওই অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও ‘সুইসাইড ভেস্ট’ উদ্ধার করেছে তারা। আটক করা হয়েছে ৭ জনকে। উদ্ধার করা হয়েছে সুইসাইড ভেস্ট।

দেশে এ ধরনের সুইসাইড ভেস্ট উদ্ধারের ঘটনা এটিই প্রথম বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।  এই ঘটনা দেশে উগ্রপন্থিদের কার্যক্রমে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে অভিমত নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।

পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গণমাধ্যম) জাহাঙ্গীর আলম জানান, আটক এক জেএমবি সদস্যের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহ আলী থানার ৯ নম্বর রোডের ‘এ’ ব্লকের ওই বাড়িতে বুধবার রাত ২টার দিকে এই অভিযান শুরু হয়।  পরে ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত চালানো হয় এ অভিযান। যাতে অংশ নেয় গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও সোয়াট ইউনিটের সদস্যরা।

অভিযানের সময় ‘জঙ্গিরা’ ঘরের ভেতর গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় পুলিশও বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি, টিয়াল শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আটককৃত ‘জঙ্গি’ ও সন্দেহভাজনদের মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, আটককৃতরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ- জেএমবি’র সদস্য। তাদের বয়স ২২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

জানা যায়, ভবনটির ছয় তলার একপাশের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ১৬টি ‘হাতে তৈরি গ্রেনেড’ এবং দুটি হাতবোমা পাওয়ার পর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা উত্তর বিসিল সারেং বাড়ি মাজার সংলগ্ন একটি খালি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেগুলো ধ্বংস করেন।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন- "আটক এই সাতজনের মধ্যে অন্তত তিনজন এমবির ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের পরিচয় জানা যাবে।”

এর আগে হোসাইনী দালান, কামরাঙ্গীর চরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এর আগে যে ধরনের হাতে তৈরি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছিল, মিরপুরের বিস্ফোরকগুলোও সেরকম বলে জানান মনিরুল।

তিনি বলেন ধারণা করা হচ্ছে, সেই গ্রেনেডগুলো এখানেই তৈরি করা হয়েছে। তিনি বাড়ির মালিকের সহায়তায় অন্যদের সরিয়ে না নিলে জঙ্গিরা তাদের জিম্মি করতে পারতো। তবু তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালাতে চেষ্টা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন গুলি করে।

পাশের বাড়ির একজন বাসিন্দা জানান,  বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ করে হৈ চৈ চিৎকার শোনা যায়। জানতে পারি, পুলিশ এসেছে, কাউকে বের হতে দিচ্ছে না। পুলিশ-র‌্যাবের গাড়িতে পুরো এলাকা ভরে যায়। সারা রাত খুব টেনশনে ছিলাম।

এছাড়া সকাল ১০টার দিকে ওই ভবনে ডজনখানেক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং ষষ্ঠ তলার  বাসা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন বলে জানান তিনি।

ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দারা জানান, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের চলাফেরা ছিল সীমিত। আশপাশের তাদের আড্ডা দিতে দেখেননি কখনও। এমনকি পাশের মসজিদে যেতে দেখেননি।

বৃহস্পতিবার বিকালে অভিযান শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ভবনটির বাইরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়।

মোট ১৬টি গ্রেনেড ও দুটি হাতবোমা উদ্ধার ও ধ্বংস করার কথা জানিয়ে অভিযান শেষে মনিরুল  সাংবাদিকদের বলেন,  "এখানেই তৈরি করা গ্রেনেডই হোসাইনী দালানে নিয়ে হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে। "

সেখানে বোমা তৈরির যেসব সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, তাতে ‘আরও অন্তত ২০০’ গ্রেনেড বানানো সম্ভব।

গ্রেনেড তৈরির জন্য লেদ মেশিন থেকে শুরু করে যাবতীয় উপকরণ সেখানে পাওয়া গেছে বলে জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

বাড়ির মালিকের বরাত দিয়ে উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, আটকরা চারমাস আগে ছয়তলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। ভাড়া নেওয়ার সময় তারা নিজেদের স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল।

অভিযান শেষে পুলিশ ওই বাসা থেকে একটি ট্রাঙ্ক, দুটি কম্পিউটার ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে যায়। এরপর প্রথম থেকে পঞ্চম তলার ভাড়াটিয়ারা নিজেদের বাসায় ফিরে যান।

তবে এরপরও পুলিশ ওই বাড়ি ঘিরে রেখেছে। অভিযান স্থলে সংবাদ কর্মীদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।