সরকারবিরোধী সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ গ্রেপ্তার
2015.08.18

গাড়ি পোড়ানোর মামলাসহ নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগে সরকারবিরোধী সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে গতকাল মঙ্গলবার জেলে পাঠিয়েছে। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “শওকত মাহমুদের নামে কয়েকটি মামলা আছে। এ কারণেই তাকে ধরা হয়েছে।”
একাধিকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন শওকত মাহমুদ, যিনি পরিবর্তিত ও বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার সমর্থক সাংবাদিকদের সঙ্গে সমঝোতা করে জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন।
পরবর্তীতে ওই সমঝোতা চেষ্টা ভেঙে যায় এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন বিএনপি–জামায়াত সমর্থক সাংবাদিকদের ফোরামকে বাইরে রেখে সরকার সমর্থকেরা মাস দুয়েক আগে প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন।
ব্যর্থ হওয়া ওই সমঝোতা প্রস্তাবে শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল এবং সরকার সমর্থক সাংবাদিক নেতারা এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন।
গতকাল মঙ্গলবার আটকের পর এই সাংবাদিক নেতাকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় গাড়ি পোড়ানোর তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
“ওনার বিরুদ্ধে আটটি মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি গাড়ি পোড়ানোর মামলায় সম্প্রতি অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এই মামলার আসামি,” জানান শওকত মাহমুদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মোমিন।
বিএনপি–জামায়াত সমর্থক বলে পরিচিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ঘটনার প্রতিবাদে গতকালই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে।
কারচুপির তথ্য তুলে ধরতে চেয়েছিলেন
রাজধানীর পান্থপথে সামারাই কনভেনশন সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল আদর্শ ঢাকা আন্দোলন। সেখানে ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করার কথা জানিয়েছিল সংগঠনটি।
ওই নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত ঢাকার দুই মেয়র প্রার্থী আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারে অংশ নিয়েছিলেন, যে সংগঠনের সদস্যসচিব শওকত মাহমুদ।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সকালেই সামারাই কনভেশন সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মূল ফটক আটকে দেয়। শওকত মাহমুদকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে সাদা পোশাকের পুলিশ, এরপর তাঁকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
“পুলিশ সভাস্থলে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারেনি আদর্শ ঢাকা আন্দোলন,” জানান সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, “যে গণতন্ত্র সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বক্তৃতা–বিবৃতি দিচ্ছেন, এটা তার প্রকাশ নয়। আমি এর নিন্দাও জানাতে চাই না।”
এদিকে পুলিশ বলেছে, আদর্শ ঢাকা আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন করতে পুলিশের অনুমতি নেয়নি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে আয়োজকদের একজন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ সংগঠনের প্যাডে সই করা একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, “ঘরোয়া সভার জন্য পুলিশের অনুমতির দরকার হয় না। তারপরও আমরা কলাবাগান থানাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা আমাদের না করেনি।”
সাড়ে তিন মাস পর সিটি নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সম্মেলন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ উল্লাহ বলেন, “সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারচুপি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জনসমক্ষে তুলে ধরতে এত দিন সময় নেওয়া হয়েছে।”