খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আদেশের ২৫ দিন
2015.03.20
পুরানো ঢাকার আদালত চত্বর থেকে নতুন ঢাকার গুলশান বা বনানী থানার দুরত্ব কয়েক কিলোমিটার।কিন্তু গত ২৫ দিনে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আদালত থেকে থানায় পৌঁছেনি।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত এই পরোয়ানা জারি করলেও তা কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার তা করছে না। আবার রাজনৈতিক হয়রাণির অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তোয়াক্কা না করে আদালতে হাজির না হওয়ার অবস্থানে অনড় আছেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় না যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের বিভ্রান্তি ও ধুম্রজাল তৈরি করা হয়েছে। আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা বলছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পাঠানো হয়েছে। তবে গুলশান ও বনানী থানা গতকালও বলছে, পরোয়ানা থানায় পৌঁছেনি।
“খালেদা জিয়াকে অবশ্যই জেলে যেতে হবে। তবে তা দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার আগে না পরে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়,” জানান খাদ্যমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম।
তাঁর মতে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার একটি আদালতে খালেদা জিয়া ও তাঁর পূত্র তারেক রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। মামলার সারবস্তু পর্যালোচনা করে আইনজ্ঞরা বলছেন, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ অন্যদের ওই দুটি মামলায় সাজা হওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই ওই মামলা দায়ের হওয়ার পর অসংখ্যবার তারিখ পিছিয়ে ইতিমধ্যে ছয় বছর পার হয়েছে। গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণও পিছিয়েছে কয়েকদফা। গত কয়েকমাস ধরে আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এর উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীরা বারবার খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করার কথা বললেও তা না করায় রাজনৈতিক অঙ্গণ ও বিচারালয়ে বিভিন্ন ধরণের আলোচনা হচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে বড় কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। তবে এর ফলে তিনি রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারেন।
তবে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত সরকারি দল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক হাজী সেলিম বলেন, “বাংলাদেশে দুইজন গরম পীর আছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যজন খালেদা জিয়া। এদের যে কোনো একজনের গায়ে হাত দিলে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যায়।”
গত ১২ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে হাজী সেলিম একথা বললেও দেশের অধিকাংশ মানুষ এই বক্তব্যের পক্ষে একমত পোষণ করেন। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই নেত্রীকে বাদ দিয়ে এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হয়েছিল।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত সরকারের ওপরই বর্তায়। খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হলে এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যেত।কিন্তু এভাবে হাজির না হতে থাকলে এক পর্যায়ে আদালতই পুলিশের কাছে পরোয়ানা তামিল না করার কারণ জানতে চাইবে।তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পরবর্তী তারিখ ছিল গত ৫ মার্চ। কিন্তু ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও ৩ মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৬ কূটনীতিকের পৃথকভাবে দেখা করেন। ওইদিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল না করার জন্য অনেকেই কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপকে কারণ বলে মনে করছেন।
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে অজুহাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়, আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি থানায় পৌঁছেনি।আবার ওইদিনই একমাস সময় দিয়ে ৫ এপ্রিল পরবর্তী হাজিরার তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
“আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সরকারের দায়িত্ব এবং তা করতেও সরকার বাধ্য,” জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল সোবহান এই প্রতিবেদককে বলেন, এটা কোনোভাবেই সরকারের দুর্বলতা নয়।
এদিকে উনিশ দিন আগে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গত ১৩ মার্চ খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ক্ষমতাসীনেরা প্রতিনিয়ত আমাকে জেল-জুলুম ও ফাঁসির ভয় দেখাচ্ছে। নানাভাবে হেনস্তা করছে। এসবে কোনো লাভ হবে না।’
খালেদার ওই বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার পেশাজীবী মহাসমাবেশে বলেছেন, ‘উনার বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে, তিনি যেন কোর্টে গিয়ে সারেন্ডার করেন। নইলে সরকার কোর্টের নির্দেশ পালনে বাধ্য হবে।’
এর আগে গত ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালতের গ্রেপ্তারি ও তল্লাশি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছামাত্রই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে তল্লাশির আদেশ বাস্তবায়ন করা হবে।
“আইন ও আদালতের প্রতি ম্যাডামের শ্রদ্ধার কমতি নেই। কিন্তু এখনকার বিষয়টি সম্পুর্ণ রাজনৈতিক। তাই রাজনৈতিক সমাধান হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে,” টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে জানান ওয়াশিংটনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক।