খালেদা লন্ডনে, রাজনীতির নানামুখি আলোচনা

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.16
BD-khaleda খালেদা জিয়া লন্ডনে পৌঁছালে তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে যাচ্ছেন। ১৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরকে ঘিরে রাজনীতিতে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে লন্ডনেই এবার ঈদ করবেন খালেদা।

আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুলাই মাসে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনের সময় মা-ছেলের দেখা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুধবার লন্ডনে পৌছান চোখের চিকিৎসার জন্য। কাগজ-কলমে এমনটা থাকলেও বাস্তবতা হলো, তার এ সফর উপলক্ষে বহুমুখি রাজনৈতিক কানাঘুষা চলছে। এ কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দলের নেতারা সেখানে জড়ো হচ্ছেন।

বিএনপিতে এই মুহূর্তে যারা প্রভাবশালী বা খালেদা জিয়া এখন যাদের পরামর্শ শোনেন তাদের বেশির ভাগই এখন লন্ডনে। দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি ক্ষমতায় যেতে  অনেক ইস্যুই খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে ছেলের সঙ্গে আলোচনা করে নিষ্পত্তি করবেন বলে দলের ভেতর গুঞ্জন রয়েছে।

“লন্ডনে চেয়ারপারসন চিকিৎসা করাতে গেলেও সেখানে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা হতে পারে। এ নিয়ে আগাম কিছু ভাবা বা বলা ঠিক হবে না” বেনারকে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান।

দীর্ঘ আট বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন দুরবস্থার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে। সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা দূরে থাক, দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংকটে পড়েছে নব্বই পরবর্তী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ শাসন করা দলটি।


দলীয় নেতাদের অনেকেই লন্ডনে, নতুন কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর থেকে লন্ডনে এসে যোগ হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. ওসমান ফারুক, বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাও লন্ডনে যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই ফ্লাইটে লন্ডনে গেছেন উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তাবিথ আউয়াল। তাবিথের বাবা চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু তিনদিন আগেই ব্যাংকক থেকে লন্ডনে পৌঁছেছেন।

দলের একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো যেহেতু বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাই জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার চাপ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।

ওই সূত্রের মতে, জঙ্গিবাদ প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান, সর্বোপরি বিএনপি এ প্রশ্নে ক্ষমতায় গেলে কী করবে, জামায়াতকে তারা ছাড়বে কিনা; তারেকের সঙ্গে কথা বলে এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে খালেদাকে।


চিকিৎসা ছাড়াও সপরিবারে ঈদ কাটাবেন

বেগম খালেদা জিয়া বুধবার সোয়া সাতটার দিকে লন্ডনে পৌঁছান। সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে সপরিবারে তিনি থাকবেন। দু’একদিন বিশ্রামের পর খালেদা জিয়ার চোখের ও হাঁটুর চিকিৎসা শুরু হবে।

“হিথ্রো বিমানবন্দরে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী তাকে ফুল হাতে স্বাগত জানান এবং বিমানবন্দর থেকে বড় ছেলে তারেক রহমান মাকে নিয়ে নিজে গাড়িয়ে চালিয়ে হোটেলে যান,” বেনারকে জানান লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক মাহাবুবুর রহমান, যিনি বন্ধ হওয়া আমার দেশ পত্রিকায় চাকরি করতেন।

ওই সাংবাদিক জানান, চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন। আসন্ন ঈদুল আজহাও তিনি এখানে করবেন। এটাই হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে প্রথম ঈদ।

এদিকে গতকাল হিথ্রো বিমানবন্দরে ৩ নম্বর টার্মিনালে বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা। এ সময় তাঁদের হাতে ছিল বিএনপির টানা তিন মাসের আন্দোলনের নানা ধ্বংসযজ্ঞের ছবি।  

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান গ্রেপ্তার হন। সপরিবারে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে অসুস্থ হয়ে মারা জানা আরাফাত রহমান।

২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

খালেদা জিয়ার লন্ডন আগমন উপলক্ষে আরাফাত রহমানের স্ত্রী ও দুই মেয়ে কয়েক দিন আগেই মালয়েশিয়া থেকে লন্ডনে এসেছেন। এখন থেকে তাঁরা লন্ডনে থাকবেন বলে জানা গেছে। ব্যক্তিগত এ সফরে বেগম খালেদা জিয়া দুই সপ্তাহ লন্ডনে থাকবেন, দলীয় সূত্র জানায়।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।