আদিবাসী খ্রিস্টান হত্যা তদন্তে তেমন অগ্রগতি নেই
2016.01.26
গত ৯ জানুয়ারি এক সাওতাল যুবক লুইস সরেনের আগুনে পুড়ে যাওয়া দেহ বাড়ির কাছে ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনা ঘটে প্রতিবেশি বন্ধুদের সাথে দেখা করে আসার ১ দিন পর।
সরেনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং তার হাত-পা শার্ট ও লুঙ্গি দিয়ে বাঁধা ছিল জানায় পুলিশ।
হাসপাতালের চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান ময়না তদন্ত করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বেনার নিউজকে বলেন, “আমরা এই খুনের ঘটনার ক্লু খোঁজার চেষ্টা করছি। কোনো সন্দেহ নেই এটা ছিল ঠান্ডা মাথায় খুন। তাকে খুন করার পর ধান ক্ষেতে নিয়ে ফেলে দেয়া হয়”।
নিয়ামতপুরের পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুল হক জানান, এই হত্যার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। তিনি বলেন, “একটা মানুষকে পুড়িয়ে মারা খুব শক্ত নার্ভের ব্যাপার, কোনো সাধারন মানুষ এটা করতে পারে না”।
পরিবারের সবাই আতংকে কাটাচ্ছে
সরেনের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপ-জেলার একটি গ্রামে। ধান ক্ষেতের সরু পথ ধরে যেতে হয়। বর্ষার দিনে ৩৫টি খ্রিষ্টান ও সাওতাল পরিবারকে গ্রামে চলাচলে খুব সমস্যায় পড়তে হয়।
সরেনের বিধবা স্ত্রী জুগিতা হেমরন (৩০) জানান, সে এবং তার স্বামী দুজনই ৮ জানুয়ারি বেকেল ৪টা পর্যন্ত ধান ক্ষেতে কাজ করেছেন। তারা একসাথে খেয়েছেন। পরে তিনি পাশের গ্রাম জাব্রি পাড়ায় বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যান। সেখানে মদ্য পান করেন। তিনি তারাতারি বাড়ি ফিরবেন বলে কথা দেন।
সরেন প্রায়ই এক কিলোমিটার দূরে জুব্রি পাড়ায় বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যান এবং মদ পান করেন।
হেমরন বেনার নিউজকে বলেন, “সে রাত ৮টার পরেও বাড়ি ফেরে নাই। আমি সেখানে যাই এবং তার খোঁজ করি। কিন্তু কেউ তাকে দেখে নাই বলে জানায়। আমি ঘুমাতে পারি নাই, এরকম কখনো সে করে নাই”।
তিনি আরো বলেন, “আমার মন অজানা আতংকে ভড়ে যায়। আমার মেয়েকে বলি তার মরা দেহ দেখে আসার জন্য, সে যেতে চায় না, পরে তাকে সাথে করে আমি সেখানে যাই। আমি পৌছার পর দেখি পুলিশ তার লাশ ঢেকে বেঁধে থানায় নিয়ে যায়”।
“এক ঝলক পায়ের দিকে তার শার্টের টুকরা কাপড় দেখে চিনতে পাই। এরপর আমি ও মেয়ে কাঁদতে থাকি”।
জমি দখলের বিষয়?
সরেনের পিতামাতা তার জন্মের আগেই ধর্মান্তরিত হন ক্যাথলিক ধর্মে। বাড়ির কাছেই স্থানীয় ক্যাথলিক চার্চ। হেরমন মনে করেন কোনো উগ্রবাদী মুসলমান এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে স্থানীয় যাজক ও পুলিশ এই ধারনা নাকচ করে দিয়েছেন।
হেরমন বলেন, “আমরা এখনো বিভ্রান্ত কেনো তাকে মারা হলো। আমরা শান্তিতেই বসবাস করছি মুসলমান ভাইদের সাথে। মুসলমান পাড়া আমাদের পাশেই”।
তিনি জানান, এখন তার দুই সন্তান শ্যামলি(১৩) আর জয়(৮)-এর ভরন পোষন নিয়ে চিন্তায় আছি।
“আমি কোনো মামলা করবো না আমার কোনো টাকা-পয়সা নাই। আল্লাহই খুনিদের বিচার করবে”।
যাজক উইলিয়াম মেরমো জানান, তার সাথে কার শত্রুতা ছিল না।
“আমরা আন্দাজে বলতে পারিনা তাকে জঙ্গিরা খুন করেছে। নিয়ামতপুরের খ্রিষ্টানদের কেউ হুমকিও দেয় নাই। তবে জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনা থাকতে পারে। আমরা চাই এই হত্যার সুষ্ঠু একটা তদন্ত হোক।
সরেন তার অধিকাংশ জমি বিক্রি করেছেন। বিক্রির ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি মেরামতের কাজে লাগিয়েছেন। তার প্রতিবেশি সময় সরেন (৬০) সে কথা জানান। তিনি শুনেছেন যে কিছু লোক তার বাকি জমিগুলি দখল করার চেষ্টায় ছিল।
আরো জানান, “তার পরিবার ভয়ে এ নিয়ে পুলিশের কাছে কিছু বলে নাই”।
পুলিশও মনে করেন, এর পেছনে জমি সংক্রান্ত কোনো ঘটনা থাকতে পারে।
নিয়ামতপুরের পুলিশ কর্মকর্তা হক জানান, “আমরা তদন্ত করে দেখবো জমি নিয়ে কোনো বিরোধের কারণে তাকে মারা হয়েছে কিনা, তার বউ সেটা নাও জানতে পারে”।
বাংলাদেশের আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, উওর-পশ্চিম জেলাগুলোর আদিবাসীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে এলাকার প্রভাবশালীদের দ্বারা যারা তাদের জমি কেড়ে নিতে চায়। তিনি আরো বলেন, “তাদেরকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে নিরাপত্তা দিতে হবে”।