মাত্র ২২ দিনে কিশোর রাকিব হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে
2015.08.25
ঘটনার মাত্র ২২ দিনের মাথায় খুলনার কিশোর রাকিব হাওলাদার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এতে প্রধান অভিযুক্ত ওয়ার্কশপ মালিক মো. শরীফ, তার মা বিউটি বেগম এবং শরীফের দূর সম্পর্কের চাচা মিন্টু মিয়াকে আসামি করা হয়েছে।
৩ আগষ্ট হত্যার পর যত দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তত দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে শিশুটির পরিবার।
রাকিবের বাবা নুরুল আলম হাওলাদার বেনারকে বলেন, “আজ রাকিব হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দিয়েছে পুলিশ। অল্পদিনের মধ্যে আইন ও প্রশাসন যে কাজ আমার জন্য করেছে, এতে আমি খুব খুশি। এমনই কম সময়ে যেন বিচার কাজ শেষ হয়”।
তিনি আরো বলেন, সেদিন আমি আরো খুশি হব, যেদিন আমার একমাত্র ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি হবে। এখন পর্যন্ত নিয়মের কোন ব্যতয় ঘটেনি। পরবর্তিতেও যেন এসব আসামিরা আইনের ফাঁক দিয়ে বেরুতে না পারে, সে দিকটা নজরে রাখার জন্য সরকারসহ সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, “আসামিদের ফাঁসিই আমার শেষ চাওয়া।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক কাজী মোস্তাক আহমেদ মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম এল এম ডি মেছবাহ উদ্দিনের আদালতে ১৯০ পৃষ্ঠার এই অভিযোগপত্র জমা দেন।
তিনি বলেন, “তিন আসামিই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।”
গত ৩ অগাস্ট বিকালে খুলনা শহরের টুটপাড়া কবরখানা এলাকায় শরীফ মোটরসে মলদ্বারে কম্প্রেসার মেশিনের পাইপের মাধ্যমে হাওয়া ঢুকিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় ১২ বছরের রাকিবকে।
ঘটনার বিবরন
রাকিবের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মলদ্বার দিয়ে কম্প্রেসার মেশিনের মাধ্যমে দেওয়া বাতাসের চাপে ওই কিশোরের পেটের ভেতরের নাড়ি, মলদ্বার, মুত্রথলি ফেটে যায়। এছাড়া পেটের ভেতরে অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে। রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়।
রাকিবের মা লাকি বেগম বেনারকে বলেন, “আমার শিশু-বাচ্চাটাকে কত নির্মমভাবে মারা হয়েছে। একজন মা হয়েও আসামি বিউটি বেগম রাকিবকে নির্যাতনের সময় অন্য দুই আসামিকে সহায়তা করে। সে আমার বাচ্চার মাথা আর মিন্টু হাত পা চেপে ধরলে, শরিফ রাকিবের পায়ুপথ দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে হাওয়া দেয়। তাদের তিন জনকেই পুলিশ আসামি করেছে জেনে আমি খুব খুশি। এখন দাবি, যেন আমার ছেলে নায্য বিচার পায়।”
তবে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শরিফ ও মিন্টু মিয়া এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ঘটনার সময় শরিফের মা বিউটি বেগম পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পেটে হাওয়া ঢোকানোর সময় রাকিব বারবার চিৎকার করে বলেছিল, ‘মামা আর দিয়েন না, আমি মরে যাচ্ছি।’ প্রায় ৪৫ সেকেন্ড পেটে হাওয়া ঢোকানোর পর রাকিব বমি করলে শরিফ ও মিন্টু মিয়া রাকিবকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরপরই শরীফ (৩৫) ও মিন্টুকে (৪০)পিটিয়ে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী। বিউটি বেগমকেও (৫৫) আটক করে পুলিশ। পরদিন তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রাকিবের বাবা।
সাক্ষ্য গ্রহন
মঙ্গলবার খুলনা পুলিশ কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি জানান, এ মামলায় দুজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে নাদিম হাসান শাহীন, রবিউল ইসলাম, সুমন ও সেলিম হাওলাদার নামে চারজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “রাকিব এক সময় শরীফের ওয়ার্কশপে কাজ করত। তাকে বিভিন্ন সময়ে বেতন কম দেওয়া হত এবং শারীরিক নির্যাতন চালানো হত বলে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। এ কারণে ক্ষোভ থেকে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে।”
এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বেনারকে বলেন, “হঠাৎ করেই দেশে শিশু হত্যা বেড়েছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা আর বিচারহীনতা এর অন্যতম একটি কারণ। তবে সিলেটের রাজন কিংবা খুলনার রাকিব হত্যা মামলার অভিযোগপত্র যত দ্রুত গতিতে জমা পড়েছে তা সত্যিই ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। পুলিশের উপর মানুষ আস্থা ফিরে আসবে। বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে শিশু হত্যাসহ সকল ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমতে থাকবে।”