১৫ লাখ শ্রমিক নেবে মালয়েশিয়া, নতুন চুক্তি সই

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2016.02.18
Share on WhatsApp
Share on WhatsApp
BD-labor বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
বেনার নিউজ

বেসরকারি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে নিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় (জি টু জি প্লাস) বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বিজনেস টু বিজনেস—বিটুবি এবং গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট—জিটুজি পদ্ধতি ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার নতুন এই সমঝোতায় অংশ নিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এই স্মারক সই হয়। দুই পক্ষের আশাবাদ হচ্ছে, চুক্তির আওতায় আগামী তিন বছরে ১৫ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। প্রবাসকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম জানান, চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে দুই পক্ষের সম্মতিতে তা বাড়ানো যাবে।

যদিও জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মত হচ্ছে, বছরে ৫ লাখ শ্রমিক পাঠানো প্রায় অসম্ভব। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করলে বছরে বড়জোর তিন লাখ শ্রমিক পাঠানো সম্ভব।

“বছরে পাঁচ লাখ শ্রমিক পাঠাতে হলে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৩৭০ জন শ্রমিক পাঠাতে হবে, যা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। তবে বছরে তিন লাখ শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হলে, সেটিও বড় ব্যাপার,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাসার।

প্রায় ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া। গতকাল ওই চুক্তি সই হওয়ার পর দেশটিতে কর্মী পাঠানোর পথ বড় আকারে খুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে সমঝোতা খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের পক্ষে গতকাল সমঝোতা স্মারকে সই করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতো রিচার্ড রায়ত আনাক জায়েম সই করেন।

মালয়েশিয়ায় এলাকাভেদে ন্যূনতম মজুরি মাসে ৮০০ থেকে ৯০০ রিঙ্গিত (প্রায় ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা)। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর্মীরা এই হারে মজুরি পাবেন।

নতুন পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় যেতে একেকজন কর্মীর ৩৪ হাজার থেকে ৩৭ হাজার টাকা খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী।

“সমঝোতা স্মারকের ফলে শিগগিরই মালয়েশিয়ায় উল্লেখযোগ্য হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আগে শুধু বনায়ন খাতে কর্মী নিয়োগের সুযোগ ছিল। এখন সেবা, নির্মাণ, কৃষি, বনায়ন ও ম্যানুফ্যাকচারিং (উৎপাদন খাত) খাতেও কর্মী নিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত হলো,” সাংবাদিকদের জানান প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম।  

মন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী নিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে দুই পক্ষের সম্মতিতে তা বাড়ানো যাবে।

অবশ্য জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার নেতাদের আশঙ্কা, নতুন প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু এজেন্সির মাধ্যমে ‘সিন্ডিকেট’ হওয়ার সুযোগ থাকছে।

সাংবাদিকদের এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, নতুন পদ্ধতিতে মনোপলির সুযোগ নেই।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ২১ লাখ কর্মী বিদেশে যাওয়ার জন্য সরকারের তথ্যভান্ডারে নিবন্ধিত হয়েছেন।এই তথ্যভান্ডারে নিবন্ধিত কর্মীর তালিকা থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জি টু জি প্লাস অনুযায়ী, কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি হবে অনলাইনে। এ জন্য মালয়েশিয়ায় একটি ওয়ান স্টপ সেন্টার থাকবে। দেশটির নিয়োগকর্তারা ওয়ান স্টপে প্রথমে তাঁদের চাহিদাপত্র দেবেন।

যে কটি চাহিদাপত্রের অনুমতি পাবেন, নিয়োগকর্তারা সেই কটির জন্য ঢাকায় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে চাহিদাপত্র পাঠাবেন।

এরপর সরকারি তথ্যভান্ডার থেকে কর্মীদের নামের তালিকা দেওয়া হবে। সেই তালিকা বিশেষ করে আঙুলের ছাপ যাচাই-বাছাই করবে মালয়েশিয়া। তালিকার অনুমোদন পাওয়া গেলে লোক পাঠানো হবে।

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে ২০০৭ সালে ২ লাখ ৭৩ হাজার ২০১ জন এবং ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৬২ জন শ্রমিক গিয়েছিলেন।

বিভিন্ন অনিয়ম ও প্রতারণার কারণে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি।

এরপর ২০১২ সালের নভেম্বরে দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে (জি টু জি) কর্মী নেওয়ার চুক্তি হয়। কিন্তু এই উদ্যোগ ‘ব্যর্থ হওয়ার’ পর এখন জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। নতুন এই চুক্তি কার্যকর হলে আগের চুক্তি বাতিল হবে।

জিটুজি পদ্ধতিতে প্রতি ছয় মাসে ৫০ হাজার শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের বিএমইটির হিসেবে, গত তিন বছরে পাঠানো হয়েছে মাত্র সাত হাজার শ্রমিক।

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া, যেখানে বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।

“সরকারের প্রত্যাশা হচ্ছে, জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া এবার স্বচ্ছ ও জবাবদিহিপূর্ণ হবে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে,” গত ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।