দলের প্রতি ‘অনুগত’ থেকে লতিফ সিদ্দিকীর পদতাগের ঘোষণা
2015.08.24
শেষ রক্ষা হল না লতিফ সিদ্দিকীর, হজ্জ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে এক বছর আগে যিনি মন্ত্রিত্ব ও দলীয় সদস্যপদ হারিয়েছিলেন। এবার আইনি লড়াইয়ের মাঝপথে জাতীয় সংসদ সদস্য পদ থেকে নিজেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন সাবেক এই মন্ত্রী ও টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
দলের প্রতি ‘অনুগত’ থাকার অজুহাতে বিষয়টি নিয়ে আর আইনি লড়াই না করে শীঘ্রই স্পিকারের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার সকালে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল করা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানি শেষে লতিফ সিদ্দিকী তাঁর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, “যেহেতু আমার নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) চান না আমি সংসদে থাকি তাই আমি নিজেই পদত্যাগ করব।”
‘অনুগত’ লতিফ সিদ্দিকী যা বললেন
রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে মাত্র ১৪ মিনিটের ওই শুনানির পর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত এই নেতা এখনও দলীয় নেতার প্রতি ‘অনুগত’ থেকে নেতার ‘ইচ্ছা’ জেনেই সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানান।
এর আগে নির্বাচন কমিশনের শুনানি বন্ধে লতিফের আবেদন খারিজের যে আদেশ হাই কোর্ট দিয়েছিল, রোববার আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। এরপর বেলা পৌনে ১১টার দিকে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়াকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে শুনানিতে অংশ নেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পক্ষে দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সহ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছার ও সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজ এবং ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহানের উপস্থিতিতে ১১টায় ইসির সম্মেলন কক্ষে শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে, নির্লিপ্তভাবে ঘোষণা করছি, আমি টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। এটা আমার ঘোষণা, আমার সিদ্ধান্ত। এ শুনানির আর দরকার নেই। স্পিকারের কাছে বিষয়টি জানানো হবে।”
পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছার তার সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানালে ‘একমত’ পোষণ করেন লতিফ সিদ্দিকী।
এদিন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইংরেজিতে লেখা একটি চিঠিও নির্বাচন কমিশনে জমা দেন লতিফ সিদ্দিকী।
দুই সপ্তাহ সময় পেলেন লতিফ সিদ্দিকী
তবে যথাযথ স্থানে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ সময় পেয়েছেন বহিষ্কৃত এই আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে নির্বাচন।
এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “শুনানি আপাতত মুলতবি রাখা হল। দুই সপ্তাহ পরে এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত জানাব।”
‘তওবা নয়তো আন্দোলন’
এদিকে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী দল হেফাজতে ইসলামের সাংগাঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বেনারকে বলেন, “পবিত্র হজ্ব নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী যে মন্তব্য করেছেন, সেজন্য তাকে অনুতপ্ত হয়ে সবার সামনে তওবা করতে হবে। নয়তো তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। এছাড়া প্রচলিত আইনে লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তি বিধান সরকারকেই করতে হবে।”
‘দলীয় শৃংখলা ভাঙলেই ব্যবস্থা’
লতিফ সিদ্দিকী নিজেকে দলের ‘অনুগত’ বললেও তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন বলছেন সরকারে থাকা দলটি। তার পদত্যাগের ঘোষনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীকে অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, “তিনি এখন দলের কেউ নন। তাই পদত্যাগের ঘোষণা না দিলেও আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি সদস্যপদ হারাতেন। এসব নিয়ে দলের ভাবনার কিছু নেই। রাষ্ট্র বিরোধী কিছু করলে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে বা দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙলে অবশ্যই দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে; তা তিনি যেই হোন না কেন।”
বিতর্কিত মন্তব্য; বহিষ্কার, আইনি লড়াই অবশেষে পদত্যাগ
গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে হজ ও তাবলীগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তি করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বিষয়টি গণমাধ্যমে এলে সমালোচনার ঝড় উঠে চারদিকে। এ সময় প্রথমে মন্ত্রিত্ব, পরে আওয়ামী লীগের সদস্যপদ হারান তিনি। শুরু থেকেই হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামিক দলগুলো তার শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে। দল থেকে বহিষ্কারের পর তার সদস্য পদ বাতিলের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়।
বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর ১৩ জুলাই পাঠানো চিঠির প্রেক্ষিতে তার সংসদ সদস্যপদ বিষয়ে শুনানির জন্য লতিফ সিদ্দিকীকে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন।
ইসির এই শুনানির এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে লতিফ সিদ্দিকী রিট উত্থাপন করেন, হাইকোর্ট তা সরাসরি খারিজ করে দেয়। পরে সে আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে যান লতিফ। রোববার হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে নির্বাচন কমিশনে যেতে বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একই দিন সকাল ১১টার দিকে ইসির শুনানিতে হাজির হন তিনি।