লিবিয়ায় আইএস জঙ্গিদের হামলায় দুই বাংলাদেশি নিহত

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.07.23
BD-libya লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি কর্মজীবীদের অনেকেই মিশর সীমান্তে অবস্থান নেয়। ফেব্রুয়ারি, ২০১১
এএফপি


লিবিয়ায় আইএস জঙ্গিদের গুলিতে মোসলেহ উদ্দিন (৩০) ও আরিফুর রহমান সিদ্দিক (২৮) নামে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, যাঁরা ঈদের ছুটিতে বেড়াতে বের হয়েছিলেন। দেশটির আজদাবিয়া এলাকায় আইএস জঙ্গিদের কবলে পড়ার পর পালাতে গেলে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়। লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশির সূত্রে গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়।

মোসলেহ উদ্দিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলার দাঁতমন্ডল গ্রামে। আর আরিফুর রহমানের বাড়ি বরিশালে।

বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য জানাতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে জানান, “গণমাধ্যমের খবর থেকে বিষয়টি তারা অবগত হয়েছেন। কিন্তু লিবিয়ার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় অফিসিয়াল তথ্য পেতে সময় লাগতে পারে।”

গত বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার চুন্টা গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী মো. রফিকের মাধ্যমে মৃত্যুর খবরটি জানতে পারে মোসলেহ উদ্দিনের পরিবার। টেলিফোনে ওই প্রবাসীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২১ জুলাই জঙ্গি হামলার এই ঘটনা ঘটে।

মোসলেহ উদ্দিন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার চিকনপুর গ্রামে আব্দুল বাছিরের ছেলে। শৈশব থেকেই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার দাঁতমন্ডল গ্রামে মামা ওয়াহেদ উল্লাহ’র বাড়িতে থাকতেন।

স্থানীয় সাংবাদিকদের সূত্রে জানা যায়, মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের সদস্যরা নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে বিলাপ করছেন।

তবে আরিফুর রহমান সিদ্দিকের বাড়ি বরিশাল হলেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

“ঈদের ছুটিতে মোসলেহ উদ্দিন, রিশালের আরিফুর রহমান সিদ্দিকসহ চার বন্ধু আজদাবিয়া এলাকায় ঘুরতে গিয়ে আইএস জঙ্গিদের কবলে পড়েন,” জানান মোসলেহ উদ্দিনের বড় ভাই মো. মোতালিব ।

একপর্যায়ে পালানোর চেষ্টা করলে জঙ্গিদের গুলিতে মোসলেহ উদ্দিন ও আরিফ নিহত হয় বলেও জানান তিনি। তাদের অপর দুই বন্ধু বেঁচে গেছে বলে জানতে পেরেছেন মোতালিব।

“আমরার সব আশা শেষ অইয়া গেছে। অহন আমি ছেলের মুখটা দেখতে চাই,” টেলিফোনে জানান মোসলেহ উদ্দিনের মা শামসুন্নাহার। তিনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় দ্রুত ছেলের লাশ দেশে আনার দাবি জানান।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারে সচ্ছলতা আনতে মোসলেহ উদ্দিন ২০০৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সুদানে পাড়ি জমান। সেখান থেকে ২০১২ সালে কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধুর সঙ্গে লিবিয়ায় চলে যান।

গত তিন বছর ধরে মোসলেহ উদ্দিন লিবিয়ার আল কুফরা সিটিতে বসবাস করতেন। সেখানে তিনি ভাড়া গাড়ি চালাতেন।

“ঘটনাটি শোনার পর নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে,” জানান নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের।

নাসিরনগরের দাঁতমন্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রাফিজ মিয়া জানান, আইএস জঙ্গিদের গুলিতেই মোসলেহ উদ্দিনের মারা যাওয়ার খবর শুনে এলাকায় শোকের পরিবেশ নেমে এসেছে।

এই দুজনসহ গত প্রায় এক বছরের মধ্যে সংঘাতপূর্ণ লিবিয়ায় অন্তত ১১ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

গত বছরের আগস্টে  লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে নরসিংদীর জাহাঙ্গীর মনির এবং যশোরের মিলন নামে দুই বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হন। তার আগে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজিতে একই ধরনের একটি ঘটনায় গত ৩০ জুলাই আরও দুই বাংলাদেশি নিহত হন।

এ ছাড়া গত বছরের জুনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানার আবাসিক ক্যাম্পে মিসাইল হামলায় শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মোহাম্মদ মিলন ও মোহাম্মদ স্বপন নামে দুই ভাইসহ তিনজন বাংলাদেশি নিহত হন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ায় বন্দুকযুদ্ধের মধ্যে পড়ে নিহত হন বরগুনার আবুল কালাম (৩২) ও পিরোজপুরের শফিকুর রহমান (৩৩)।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।