লতিফ সিদ্দিকী জামিন পাওয়ায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর হুমকি

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.06.30
BD-lotif লতিফ সিদ্দিকী জামিনে মুক্তি পাওয়ায় তাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং মৃত্যুদন্ডের দাবিতে রাজধানীতে মিছিল করে খেলাফত মজলিশ। ৩০জুন,২০১৫
বেনার নিউজ

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী জামিনে মুক্তি পাওয়ায় তাকে অবিলম্বে পূনরায় গ্রেপ্তারের জন্য সরকারকে শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মোর্চা ইসলামি ঐক্যজোট। তা নাহলে এর পরিনতি সম্পর্কে হুশিয়ার করে দেন তারা। তাকে কতল বা মাথা কেটে হত্যার হুমকি দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এনিয়ে যাতে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সরকার সেদিকে খেয়াল রাখছে। সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সরকার বিষয়টি সুরাহা করতে চায়।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ২৯ জুন জামিনে মুক্তি পান। তিনি কারাবন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। মুক্তি পেয়ে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় যান।

“সব মামলায় লতিফ সিদ্দিকী জামিন পেয়েছেন। হাইকোর্ট থেকে সাবেক এই মন্ত্রী প্রথমে সাত মামলা এবং পরে আরও ১০ মামলায় জামিন পান,” বেনারকে জানান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ফরমান আলী।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে লোকজন অযথা টাকা-পয়সা খরচ করে হজ করতে যায়, এর কোনো অর্থ হয় না। এরপর তিনি মন্ত্রিত্ব হারান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত হন।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও কটূক্তির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

দেশে ফিরে গত বছরের ২৫ নভেম্বর ধানমন্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করার পর আদালত লতিফ সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রায় ছয় মাস জেল খেটে তিনি বের হলেও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে ইসলামি দলগুলো।


ইসলামি দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

লতিফ সিদ্দিকী জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ইসলা্মি ঐক্যজোট, ইসলামি ছাত্র খেলাফত বাংলাদেশ, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিশ পৃথক পৃথক প্রতিক্রিয়া ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

লতিফ সিদ্দিকীকে শুক্রবারের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে দেশব্যাপী হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচির হুমকি দেয় ঐক্যজোট। বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামি ছাত্র খেলাফত বাংলাদেশ। মঙ্গলবার দুপুরে লালবাগে বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনটি। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী ১৫ রমজান দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও ১৭ রমজান ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে।


লতিফ সিদ্দিকীকে কতল বা মাথা কেটে হত্যার হুমকি দিয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেমদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখার সদস্যসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব এ হুমকি দেন।

“বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে কোনো নাস্তিককে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এখনো ছেড়ে দেওয়া হবে না। লতিফ সিদ্দিকীকে বাংলাদেশের মাটিতে মুক্ত অবস্থায় থাকতে দেওয়া হবে না। যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই কতল করা হবে,” এক ইফতার মাহফিলে এ কথা জানান আল হাবিব।


লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তির প্রতিবাদ করে আবারও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে খেলাফত মজলিশ।

দলটি সরকারকে সাবধান করে দিয়ে জানায়, লতিফ সিদ্দিকীকে আবারও গ্রেপ্তার করা না হলে তাওহিদী জনতার তীব্র আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায় বহন করতে হবে।


সরকারি দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়া

ইসলামী দলগুলোর হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি দলের একাধিক নেতা জানান, বিষয়টির সঙ্গে একদিকে ধর্মীয় অনুভূতি, আরেকদিকে আদালতের বিষয় জড়িত। তাঁরা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

মন্ত্রিসভার একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন, এ নিয়ে নতুন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি যাতে না হয় সেদিকে সরকার নজর রাখছে।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না।

তবে সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সরকার বিষয়টি সুরাহা করতে চায়। পবিত্র রমজান মাসে এ নিয়ে যাতে নতুন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ইসলামি দলগুলোর প্রতিক্রিয়া তারা জানতে পারছে। পবিত্র এই মাসে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা থাকবে তাঁদের। ওই সূত্রের মতে, জামিন পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। কিন্তু বিচার তো আর শেষ হয়নি।


এখনও সাংসদ লতিফ সিদ্দিকী

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিস্কৃত হলেও জাতীয় সংসদে এখনও তিনি ওই দলের সংসদ সদস্য হিসাবে রয়েছেন।

জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে লতিফ সিদ্দিকীর বহিস্কারের ব্যাপারে আমি অবহতি নই। আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তিনি আগে যেভাবে সংসদে ছিলেন, এখনও তিনি আমার কাছে সেভাবেই আছেন।’

জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, “এ বিষয়ে আমি কোনো খবরের অংশীদার হতে চাই না।”

গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পদ ও তার কিছুদিন পরে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের বিষয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত অজ্ঞাত কারণে আটকে আছে।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক সাংবাদিকদের বলেন,  যেহেতু তিনি (লতিফ সিদ্দিকী) সংসদ সদস্য, তাই আওয়ামী লীগের কর্তব্য বিষয়টি স্পিকারকে অবহিত করা। তখন স্পিকার বিষয়টি আইন অনুযায়ী তা নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।